পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু \రిస్టిరి এক মুহূৰ্ত্তে মনটা হালকা হয়ে গেল—তাই বল! হরি হরি! পাখি ! চিন্তাটা আমার সম্পূর্ণ শেষও হয়নি—পরক্ষণে আমার চারপাশে মেয়ে-গলায় কারা খলখল ক'রে হেসে উঠল। হাসির শব্দে আমার গায়ের রক্ত আরও হিম হয়ে জমে গেল যেন। চেয়ে দেথি তখন একটাও পাথি নয়, সবই অল্পবয়সী বোঁ । তারা তখন সবাই একযোগে ঘোমটা খুলে আমার দিকে চেয়ে আছে। আর তাদের চারদিকে, সেই বড় মাঠের যেদিকে তাকাই, অসংখ্য নরকঙ্কাল দূরে, নিকটে, ডাইনে, বায়ে, অন্ধকারের মধ্যে সাদা সাদা দাড়িয়ে আছে। কত কালের পুরোনো জীর্ণ হাড়ের কঙ্কাল, তাদের অনেকগুলোর হাতের সব অণ্ডল নেই, অনেকগুলোর হাড় রোদে জলে চট উঠে ক্ষয়ে গিয়েছে, কোনটার মাথার খুলি ফুটে, কোনটার পায়ের নলির হাড় ভেঙে বেঁকে আছে। তাদের মুখও নানাদিকে ফেরানো—দাড়াবার ভঙ্গি দেখে মনে হয়, কেউ যেন তাদের বহু যত্নে তুলে ধরে দাড় করিয়ে রেখেছে। কঙ্কালের আড়ালে পেছন থেকে যে লোকটা এদের খাড়া ক’রে রেখেছে, সে যেই ছেড়ে দেবে, অমনি কঙ্কালগুলো হুড়মুড় ক’রে ভেঙ্গে পড়ে গিয়ে জীর্ণ ভাঙাচোরা তোবড়ানো, নোন-ধরা, হাড়ের রাশি স্তুপাকার হয়ে উঠবে। অথচ তারা যেন সবাই সজীব, সকলেই আমাকে পাহার দিচ্ছে, আমি যেন প্রাণ নিয়ে এ শ্মশান থেকে পালাতে না পারি। হাড়ের হাত বাড়িয়ে একযোগে সবাই যেন আমার গলা টিপে মারবার অপেক্ষায় আছে। উঠে সোজা দৌড় দেব ভাবছি, এমন সময় দেখি আমার সামনে এক অতি রূপসী বালিকা আমার পথ আগলে হাসিমুখে দাড়িয়ে। এ আবার কে ? যা হোক, সব রকম ব্যাপারের জন্যে আজ প্রস্তুত না হয়ে আর শবসাধন করতে নামি নি। আমি কিছু বলবার আগে মেয়েটি হেসে হেসে বললে—আমি ষোড়শী, মহাবিদ্যাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ, আমায় তোমার পছন্দ হয় না ? মহাবিদ্যা-টহাবিদ্যার নাম শুনেছিলাম বটে পাগলীর কাছে, কিন্তু তাদের তো শুনেছি অনেক সাধনা করেও দেখা মেলে না, আর এত সহজে ইনি বললাম—আমার মহাসৌভাগ্য যে আপনি এসেছেন আমার জীবন ধষ্ঠ হ’ল— মেয়েটি বললে—তবে তুমি মহাডমির সাধন করছ কেন ? —আজ্ঞে, আমি তো জানি নে কোন সাধনা কি রকম। পাগলী আমার যেমন বলে দিয়েছে, তেমনি করছি । —বেশ, মহাভামরী সাধনা তুমি ছাড় । ও মন্ত্র জপ করে না। যখন দেখা দিয়েছি তখন তোমার আর কিছুতে দরকার নেই। তুমি মহাভামরী ভৈরবীকে দেখ নি—অতি বিকট তার চেহারা । তুমি ভয় পাবে। ছেড়ে দাও ও মন্ত্র। সাহসে ভর করে বললাম—সাধনা ক’রে আপনাদের আনতে হয় শুনেছি, আপনি এত সহজে আমাকে দেখা দিলেন কেন ? ' —তোমার সন্দেহ হচ্ছে ?