পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪১৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8०२ বিভূতি-রচনাবলী দেনার টাকার স্বদের তাগাদা—আর বাবার যত মিথ্যে কথা বানাইয়া বলা পাওনাদার বিদায় করিতে। আজ সে ইপি ছাড়িয়া বাচিল । রাণাঘাট স্টেশনে গাড়ী বদল করিয়া মুর্শিদাবাদ লাইনের গাড়ীতে চাপিতে হইল। মুড়াগাছার নামিয়া ক্রোশখানেক হাটিয়া বৈকাল তিনটার সময় সে শ্বশুরবাড়ীতে গিয়া পৌছিল। শাশুড়ী বেীকে দেখিয়া বলিলেন—এই যে নবাবের মেয়ে, তা এতদিন পরে কি মনে ক’রে ? সঙ্গে কে ? ছোট ভাই—ও, সেই নৰু না ? এসে এসে বাবা, মুখে থাকে, চিরজীবী হও । তা.বেশ ছেলেটি । কিন্তু শাশুড়ীর অমায়িকতা তিনদিনের মধ্যেই ঘুচিয়া গেল। রাধার বিধবা বড় ননদ ভ্রাতৃবধূকে পুনরায় এ বাড়ীতে আসিতে দেখিয়া সন্তুষ্ট হন নাই। রাধার গলার ছ'ভরির হার সেবার শাশুড়ী কাড়িয়া রাখিয়াছিলেন, সেই হারছড়া ভাঙিয়া ননদের মেয়ের বিয়ের সময় হাতের রুলি আর বালা গড়াইয়া দেওয়া হইয়াছে। বড় ননদ ভাবিয়াছিলেন, আজ ছ’বছর যে বে এ বাড়ী আসে নাই, সে আর আসিবে না । কিন্তু আপদ আবার আসিয়া যখন জুটিল, তখন তো হারের দাবি করিয়া বসিবে। হইলও তাই। রাধা শাশুড়ীর কাছে হার চাহিল। শাশুড়ী বলিলেন—তোমার বাবা যে টাকা বিয়েতে দেবেন বলেছিলেন, তা দেন নি—দুশো টাকা বাকি ছিল । তার দরুণ হার রেখে দিই। সে টাকা নিয়ে এসে আগে, হার এখুনি বার ক’রে দিচ্ছি । বড় ননদও এই কথায় সার দিলেন । রাধা বলিল—বারে, অামার বাবার গড়িয়ে দেওয়া, তোমরা তো আর দাও নি ? বাবা টাকা দিয়েছেন কিনা সে তোমরা বোঝ গিয়ে তার সঙ্গে। আমার হার কেন তোমরা দেবে না ? কিন্তু টাকাকড়ির কথা আর কি অত সহজে মেটে ! রাধা বলিল, আমার বাবার দেওয়া তোরঙ্গ, তাই বা তোমরা কেন আটকে রাখবে ? অার তোরঙ্গের চাবি ভেঙ্গে তোমরা জিনিসপত্র বার করে নিয়েছ কেন ? শাশুড়ী ও ননদ দুজনে মিলিয়া বলিলেন, চাবি কেহ ভাঙ্গে নাই, ভাঙ্গাই ছিল। রাধা বলিল, আমার নতুন তোরঙ্গ, চাবি ভাঙ্গা থাকলেই হ’ল ? তোমরা ভেঙ্গেচ ৷ যত চোরের ঝাড়, দাও আমার হারছড়া— শাশুড়ী বলিলেন, মুখ সামলে কথা বলে বোমা, বলচি– উভয়পক্ষে তুমুল ঝগড়া বাধিয়া গেল। ননদ মারিতে আসিলেন ভ্রাতৃবধূকে। নবুকে সেদিন আর কেহ খাইতে ডাকিল না। রাধার তে কথাই নাই, তাহাকে কে আদর করিয়া খাওয়াইবে, সে যখন তার বিবাহের হার ও তোরঙ্গ চাহিতে আসিয়াছে ? দুপুরের পরে ঝগড়াবীটি করি নবুকে সঙ্গে লইয়া রাধা ধর্শদহ গ্রাম হইতে মুড়াগাছা স্টেশনে হাটিয়া আসিল । দুজনেরই অনাহার । মনে পড়িল এই শ্রাবণ মাস, এই শ্রাবণ