পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু 8 ev) মাসেই সে ওই পথেই একদিন পালকি করিয়া নববধূরূপে আসিয়াছিল। কথাটা মনে, আসিতেই রাধার চোখে জল বাধা মানিল না। স্টেশনে আসিবার সারা পথটাই সে কাদিতে কাদিতে আসিল । ট্রেনটি আসিলে তাঁহাতে কলের পুতুলের মতো বসিয়া রাধা কত কথা ভাবিতে লাগিল। মিছামিছি প্রায় তিনটি টাকা খরচ হইয়া গেল। এ টাকা অবখ তাহার বাপের বাড়ীর নয়\ তাহার নিজেরই জমানে টাকা। টাকাটা হাতে থাকিলে টানাটানির সংসারে কত কাজ দিত। বাবার অমতে আসা হইয়াছে, শুধু-হাতে ফিরিলে বাবার বকুনি খাইতে হইবে, মা মুখ ভার করিয়া থাকিবে । ছ'ভরির হারছড়া—লইয়া যাইতে পারিবার আশা করিয়াই সে আসিয়াছিল। বাবা-মায়েরও সে অাশা যে একেবারে না ছিল তা নয়। এবার সকলে রাগ করিবে । তা ছাড়া ভবিষ্যতে শ্বশুরবাড়ী আসিবার পথও গেল । শাশুড়ীর সঙ্গে ঝগড়া না করিলেই হইত। না হয় গিয়াছেই হারছড়াটা ! বাপ মায়ের অবর্তমানে শ্বশুরবাড়ীতে একটু দাড়াইবার স্থানও তো হইত! তাহার জীবনে কোন মুখ নাই। বাড়ী গিয়া তো সেই একঘেয়ে ব্যাপার। সেই ডোবার ধারে সকালে বাসন মাজা, সেই গোয়াল পরিষ্কার, সেই রাধাবাড়া। সুবি—ত সে-ও তেমন মন খুলিয়া কথা কয় না। সে অনেক কিছু ভুলিতে পারিত, যদি সুবি তাস্থার সঙ্গে হাসিয়া আলাপ করিত, প্রাণ খুলিয়া মিশিত। তা করে না— , কত করিয়া সাধিয়া কত ভাবে মন যোগাইয়া রাধা দেথিয়াছে। সত্যি, জীবন সব দিক দিয়াই অন্ধকার। বাচিয়া কি মুখ ? কাল সকালে কি হইবে সে বেশ স্পষ্ট দেখিতে পাইতেছে । রাত্রে আজ সে বাড়ী ফিরিলেই বাবার সঙ্গে মায়ের ঝগড়া বাধিবে। অর্থাৎ সে হার আদায় করিতে না পারিয়া ফিরিলেই বাবার আশাভঙ্গের রাগটা গি পড়িবে মা'র উপর, দুজনে ধুন্ধুমার বাধিয়া যাইবে। কাল সকালে ডোবাতে বাসন মাজিবার সময় মুখুয্যে পাড়ার ঘাট, জেলে পাড়ার ঘাটের সবাই জানিতে চাহিবে সে এত শীঘ্র শ্বশুরবাড়ী হইতে ফিরিল কেন। শাশুড়ী কি করিল, কি বলিল —এই কৈফিয়ত দিতে দিতে আর মিথ্যে কথা বানাইয়া বলিতে বলিতে তাহার প্রাণ অতিষ্ঠ হইয়া উঠিবে। কারণ, সত্যকথা তো সে বলিতে পারবে না। রায়-বাড়ীর কুচুটে মেজ বেী মুখ টিপিয়া হাসিবে। সুবি নামিবে ওদের নিজেদের ঘাটেৰ কচুতলার চায়ের বাসন ধুইতে। নিজে হইতে একটা কথাও সে জিজ্ঞাসা করিবে ন যে, রাধা কবে আসিল বা কিছু। রাধাকে প্রথমে কথা বলিতে হইবে। মুবি দু'একটা ‘ই’ না গোছের দায়সার উত্তর দিয়া চায়ের পেয়ালা পিরিচ উঠাইয়া লইয়া চলিয়া যাইবে, যেন বেশীক্ষণ ডোবার ঘাটে দাড়াইয়া ওর সঙ্গে কথা বলিলে তার আভিজাত্য খর্ব হইয়া যাইবে । বাসন-মাজার পরে ঘাটে যাওয়া, রান্না, থাওরানো দাওয়ানো, দুপুরে পান মুখে দিয়াই ছুটিতে হইবে ঘাটে, গরুকে জল খাওয়াইতে সে নদীর ধারের মাঠে, যেখানে গরুকে গোজ পুতির রাখিয়া আসা হইয়াছে। সেই সময়টা যা একটু ভালো লাগে-নীল আকাশ, নদীর ধারে কাশ ফুল দোলে, সমস্ত জিউলি গাছের গা বাহিরা সাদা সাদা মোম-বাতি-বারা মোমের মতো আট ঝরিয়া পড়ে, হু হু খোলা হাওয়া বর ওপারের