পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

জন্ম ও মৃত্যু 8e 4 —উ বাবা, চার পয়সা । তবে থাক্ গে। মোটে আর ন’টি পয়সা আছে। বাবার জন্য একখানা পাউরুটি কিনে নিতে হবে। দুধ দিয়ে পাউকটি খেতে ভালোবাসেন বাবা । মা'র জন্ত কি নেব বল তো ? 3. রাণাঘাট স্টেশনে দাড়াইয়া রাধার মনের দুঃখ অনেকটা চলিয়া গিয়াছে। কত লোক-জন, গাড়ী-ঘোড়া, দোকান, পসার—দেখিলে মনে শান্তি পাওয়া যায়। এমন সময়ে প্লাটফর্শ্বে একটা শব্দ উত্থিত হুইল—লোক-জন, পানওয়ালা, পাউরুটিওয়ালারা, সন্ত্রস্ত হইয়া উঠিল। লোক যে যেখানে ছিল দাডাইয়া উঠিল। রাধা একটি কুলকে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিল, ডাক-গাড়ী আসিতেছে। দাৰ্জিলিং মেল । অল্পক্ষণ পরেই সশব্দে বিশাল ট্রেণখানা প্লাটফর্মের ওপ্রান্তে প্রবেশ করিল। সঙ্গে সঙ্গে ভিড়, হাকাইকি, লোক-জনের দৌড়াদৌডি, পুরি-তরকারি, পান-বিড়ি-সিগারেট, কুলি কুলি’, ইধার আও, হৈ-হৈ ব্যাপার। স্টেশন সরগরম হইয়া উঠিল ; রাধা আর নবু যেখানে. ট্রাডাইয়াছিল, তারই সামনে ডাক-গাভীর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী কামরাগুলি থামিল। : রাধা অবাক হইরা চাহিয়া চাহিয়া দেখিতেছিল। ঝকঝক তকতক কবিতেছে কামরাগুলি । কি রকম পুরু চামডার গদি-যঁাটা বেঞ্চি। সাহেব, মেম, মোমের পুতুলের মতো তাদের ছেলেমেয়ের দামী শাডি-পরা সুন্দরী বাঙালী বড়লোকের মেয়ের.সুবি কোথায় লাগে এদের কাছে ? বেহারীরা ট্রের উপর চায়ের জিনিস বসাইয়া ছুটাছুটি করিতেছে একটি অতি সুন্দর ছ'সাত বছরের ফ্রকৃ-পরা সাহেবদেব মেয়ে প্লাটফৰ্ম্মে নাসির লাফাইতেছিল—তার মা আসিয়া তার হাত ধরিয়া গাভীর মধ্যে উঠাইয়া লইতে লইতে কি বলিল—হিট হিট, প্রিং প্ৰিং —কেমন মজার কথা ওদের ? হাসি পায় শুনিলে। সত্যি কি চমৎকার দেখিতে খুকিটা ! নবু বলিল—এই দিকে এ.গ স্থাখো দিদি, খাবার গাড়ী। একখানা খুব বড় লম্বা গাডির মধ্যে সারি সারি টেবিল পাত, টেবিলের উপর ধপধপে চাদর, কাচের ফুলদানিতে ফুল সাজানো, চকচকে সব কাচের বাসন ! মেলা সাহেব-মেম থাইতে বসিয়াছে। বাঙালীর মেয়েও অাছে তাদের মধ্যে। তবে বেশি নয়-দু’একজন। আঠারো উনিশ বছরের একটি বাঙালীর মেয়ে বেশি দামের টিকিটের কামরা হইতে নামিয়া প্লাটফৰ্ম্মে দাড়াইয় ফল কিনিতেছে। রাধা কি দেখিল, কি পাইল জানি ল কিন্তু ডাকগাড়ীখানা তার সুশী সুবেশ আরোহীদল ও সুসজ্জিত ঝকঝকে তকতকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরাগুলি লইয়া তাহার মনে একটি অপূৰ্ব্ব আনন্দ, উৎসাহ ও উত্তেজনার স্বাক্ট করিল। সমস্ত দাৰ্জিলিং মেলখানা যেন একটি উদ্দীপনাময়ী কবিতা—কিংবা কোনো প্রতিভাবান গায়কের মুখে শোনা সঙ্গীত। রাধার মনে হইল, এই ভালো কাপড়-চোপড়-পরা মুন্দর চেহারার যেয়ে-পুরুষ, বালক বালিকাদের সে দেখিতে পাইতে পারে—যদি মাত্র ছ’ মানা পয়সা খরচ করিয়া রাণাঘাট স্টেশনে আসে। যে পৃথিবীতে এর আছে,সেখানে তার বাবার বাতের বেদন, ছবির হৃদয়হীনতা, মায়ের খিটখিটে মেজাজ, বাবা-মায়ের ঝগড়, শাশুড়ীর নির ব্যবহার সব ভুলিয়া যাইতে হয়, এমন কি তার