পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8X8 বিভূতি-রচনাবলী সাবিত্ৰী-মন্দিরের পাশ দিয়ে রাস্ত চলে গেল গ্রামের বাইরে মাঠ ও বনের দিকে। একাই চলেছি, শালবনের কচি পাতা গজিয়েছে, কুসুম-গাছের রঙিন কচি পাতার সম্ভার দূর থেকে ফুল বলে ভুল হয়। গ্রাম ছাড়িয়ে পায়ে-চলা মাঠের পথ শালবনের মধ্যে দিয়ে দূর থেকে দূরাস্তরে অদৃপ্ত হয়েছে—মুড়ি পথের দুধারে শালবন। একাই চলেছি। এ পথে কখনো আসি নি, কোথায় কি আছে জানি নে। ভালুক বেরুবে না তো ? শুকনো শালপাতার ওপরে খসখস্ শব্দ হোলেই ভাবছি এইবার বোধ হয় ভালুকের দর্শনলাভ ঘটলো। আরও এগিয়ে চলেছি—একটা ছোট পাহাড়ী নদী ঝিবুঝির করে বয়ে চলেছে পথের ওপর দিয়ে। হাটুথানেক জল, এমনি পার হয়ে ওপারের পাড়ে উঠলাম— উচু কাকর-মাটির পাড়। শহর থেকে প্রায় দেড় মাইল চলে এসেছি। জ্যোৎস্বাক্ষাত উদার বন-প্রাস্তর আমার সামনে। ফিরবার ইচ্ছা নেই। আরও খানিক গিয়ে শালবন পাতলা হয়ে এল—মাঠের মধ্যে দূরে একটা আলো জলছে দেখে সেদিক গেলাম। ছোট একখানা খডের ঘর, ফাকা মাঠের মধ্যে—একটু দূরে একটা গ্রাম আছে বলে মনে হোল। ঘরখানার চারিদিকে বাশকঞ্চির বেড়া, আমার স্বর শুনে গেরুয়া পরা একটি সন্ন্যাসী ঘর থেকে বার হয়ে এসে বললেন—কোথা থেকে আসছেন ? আমি বললাম, ঝাড়গ্রাম থেকে। এটা কি আপনার আশ্রম ? —হঁ্যা, আমুন বসুন। - সন্ন্যাসী একখানা দড়ির খাটিয়া ঘরের সামনে মাঠে জ্যোৎস্নায় পেতে দিলেন । বেশ চমৎকার লাগছিল আমার, একদিকে অস্পষ্ট বনরেখা, অন্ত দিকে ধুধু করছে জ্যোৎস্নালোকিত প্রান্তর। শহরের পথ চিনে ফিরতে পারবো কি না এই রাত্রে, তাই বা কে জানে ? পায়ে-চলা সরু আঁক-বাক মাটির পথের সন্ধান যদি না-ই মেলে ফেরবার মুখে ? সন্ন্যাসী বললেন—রাতে বেরিয়েছেন এক ? —কেন, কোনো ভয়-ভীত আছে নাকি ? —না, কিসের ভয়। তবে ভালুক-টালুক দু একটা— —ওর জন্তে ভাবনা নেই। হাট থেকে হরদম লোক যাতায়াত করছে এপথে—মানুষের সাড়া পেলে ভালুক থাকে না । আমার ইচ্ছে হচ্ছে এই জ্যোৎস্নায় অপরিচিত সন্ন্যাসীর সঙ্গে বসে অনেকক্ষণ ধরে গল্প করি, ওঁর জীবনের কাহিনী সব জেনে নিই। কোথায় বাড়ী, কোথায় দেশ, এসব শুনি। একটা প্রকাও শিমুল গাছ আশ্রমের বেড়ার গায়েই মাটিতে পড়ে আছে—অথচ তাতে অনেক ফুলও ধরেছে । বললাম—গত আশ্বিনের ঝড়েই বুঝি গাছটা পড়েছে ? —ই্য, এদিকে ততটা হয় নি, তবুও দু-দশটা গাছ পড়েছে বৈকি। —মেদিনীপুরের ওই দিকটার সর্বনাশ করে দিয়ে গেল, অথচ পশ্চিম মেদিনীপুরে বিশেষ