পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বনে-পাহাড়ে ৪২৩ বর্ষাকালে এখানে একটা পুকুরের স্বষ্টি হয়। মিঃ সিংহের মুখে শুনলাম, এটাই মাছ ধরার বঁধে । কোথা থেকে মাছ আসে একথা আমি জিজ্ঞেস করি নি । - তখন সে সব তুচ্ছ প্রশ্নের অবকাশও ছিল না। সন্ধ্যার অন্ধকার চারিদিকে অরণ্যের অলি-গলিতে, স্বড়ি পথে ঘন হয়ে নামচে । যেখানটাতে মাছের বাধ তার চারিধারে বড় বড় শালগাছ উচু হয়ে আকাশকে ঢেকেচে—শুধু অন্ধকার আর জলপতনধ্বনি আর নির্জনতা আর মনের মধ্যে এক রকমের গা-ছমছম কর। ভয়ের বিচিত্র অনুভূতি। মাছের বাঁধ ছেড়ে আরও প্রায় দু রশি গিয়েচি তখন। দু রশি কি তিন রশি, কিন্তু চারিদিকে চেয়ে আমার মনে হোল এ পৃথিবীতে আমি আর এই দুই বন-বিভাগের কৰ্ম্মচারী ছাড়া ( দুজনেই মিঃ সিংহ-হরদয়াল সিং ও যোগীন্দ্র সিংহ) আর বুঝি কেউ নেই—আফ্রিকার ঘন অরণ্যে নর-খাদক অসভ্য জাতিদের দেশে যেন এসে স্নাটক পড়ে গিয়েচি। যেমন ঘন বনানী তেমনি ঘন অন্ধকার চারিপাশে । * a .” .. হরদয়াল সিংহঠাৎ বস্তৃগুণ-এইখান্ট একটু সাবধান, রয়েল বেঙ্গল টাইগার এখানকার ওই ঘড়ি পথটা দিয়ে জল খেতে নামে খ্রীস্থt. জঙ্গলের একপাশ দিয়ে একটুখানি সরু পথরেখা অন্ধকারেও ধেন বিভীষিকার স্বষ্টি করে রেখেচে মনে হোল। বললুম—তা গিয়ে—এবার ফিরলে ভালো হোত না ? বাংলো থেকে প্লায় মাইল দেড়েক তো এসে গিয়েচি । ফিরবার পথে আবার সেই হো-মেয়েদের আস্তান। বাঘের, হাতীর, বুনো ভালুকের দেশের মেয়ে এরা। দিব্যি সেই অরণ্য মধ্যে দরজাহীন, অর্গলহীন পাতার কুঁড়ের মধ্যে বসে আগুন জালিয়ে রান্নাবান্না করচে। কেউ কেউ কুঁড়ের সামনে বসে চেটাই বুনচে, গল্প কংচে, গান করচে । আমাদের দেখে আবার ওর হাসতে লাগলো—অথচ হাসবার কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণই খুজে পাওয়া যাচ্ছে না, ছেলেমানুষের মত সম্পূর্ণ অকারণে উচ্ছ্বসিত হাসির প্রবাহ। আমাদের আপ্যায়ন করে বললে-জোম পে—জোম পে— আমি জিজ্ঞেস করলুম-কি বলে ? —বলচে, ভাত তৈরি—থাও । —চলুন দেখা যাক-কি খাচ্ছে। বড় বড় মেটে হাড়িতে ভাত সিদ্ধ হয়েচে, অথচ কোনো দিকে কিছু দেখা গেল না। ওরা বড় কাসার উচু থালাতে এক রাশ ভাত চেলেছে এক একজনের জন্য। শুধুই ভাত- ইনই বা কৈ ! আশ্চৰ্য্য এই যে, ওই নিটোল স্বাস্থ্য শুধু এই উপাদানবিহীন ভাত খেয়ে। আমি মিঃ সিংহকে বললুম-ওদের জিজ্ঞেস করুন, ওরা ভাল তরকারী খায় না কেন ? অামার প্রশ্নের অর্থ যখন তাদের বোধগম্য হোল, তখন তারা আর এক প্রন্থ হেসে উঠলো—যেন আমি খুব একটা হাসির কথা বলেছি। উত্তর দিলে—এই খাই। কারণ নেই, যুক্তি নেই, কথার বাহুল্য নেই। শুধু উত্তর দিলে—এই খাই।