পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক २झे অমন করুণ দৃপ্ত কখনও দেখি নাই—দেখিয়া পিপাসাওঁ বন্ত জস্তুদের নিরীহ শরীরে অতর্কিতে গুলি মারিবার প্রবৃত্তি হইল না। এদিকে বৈশাখও কাটিয়া গেল। কোথাও একফোট জল নাই। এক বিপদ দেখা দিল । এই মুবিস্তীর্ণ বনপ্রান্তরের মাঝে মাঝে লোকে দিক হারাইয়া আগেও পথ ভুলিয়া যাইত— এখন এই সব পথহারা পথিকদের জলাভাবে প্রাণ হারাইবার সমূহ আশঙ্কা দাড়াইল, কারণ ফুলকিয়া বইহার হইতে গ্র্যান্ট সাহেবের বটগাছ পৰ্য্যন্তবিশালতৃণভূমির মধ্যে কোথাও একবিন্দু জল নাই। এক-আধটা শুষ্কপ্রায় কুণ্ড যেখানে আছে, অনভিজ্ঞ দিগভ্রান্ত পথিকদের পক্ষে সে সব খুজিয়া পাওয়া সহজ নয়। একদিনের ঘটনা বলি । 8 সেদিন বেলা চারটার সময় অত্যন্ত গরমে কাজে মন বসাইতে না পারিয়া একখানা কি বই পড়িতেছি, এমন সময় রামবিরিজ সিং আসিয়া এত্তেলা করিল, কাছারির পশ্চিমদিকে উচু ডাঙার উপরে একজন কে অদ্ভুত ধরণের পাগলা লোক দেখা যাইতেছে—সে হাত-পা নাড়িয়া দূর হইতে কি যেন বলিতেছে। বাহিরে গিয়া দেখিলাম সত্যই দুরের ডাঙাটার উপরে কে একজন দাডাইয়—মনে হইল মাতালের মত টলিতে টলিতে এদিকেই আসিতেছে । কাছারি মুদ্ধ লোক জড় হইয়া সেদিকে হা করিয়া চাঙ্গিয়া আছে দেখিয়া আমি দুজন সিপাহী পাঠাইয়া দিলাম লোকটাকে এথানে অগনিতে । লোকটাকে যখন আনা হইল, দেখিলাম তাহার গায়ে কোন জামা নাই—পরনে মাত্র একখানা ফসর্ণ ধুতি, চেহারা ভাল, রং গৌরবর্ণ। কিন্তু তাহার মুখের আকৃতি অতি ভীষণ, গালের দুই কশ বাহিয়া কেনা বাহির হইতেছে, চোখদুটি জবাফুলের মত লাল, চোখে উন্মাদের মত দৃষ্টি। আমার ঘরের দাওয়ায় একটা বালতিতে জল ছিল—তাই দেখিয়া সে পাগলের মত ছুটিয়া বালতির দিকে গেল। মুনেশ্বর সিং চাকুলাদার ব্যাপারটা বুঝিয়া তাড়াতাড়ি বালতি সরাইয়া লইল । তাহার পর তাহাকে বসাইয়া ই করাইয়া দেখা গেল জিভ ফুলিয়া বীভৎস ব্যাপার হইয়াছে। অতি কষ্টে জিভটা মুখের এক পাশে সরাইয়া একটু একটু করিয়া তার মুখে জল দিতে দিতে আধ ঘণ্টা পরে লোকটা কথঞ্চিৎ স্বত্ব হইল। কাছারিতে লেবু ছিল লেবুর রস ও গরম জল এক মাস তাহাকে খাইতে দিলাম। ক্রমে ঘণ্টাখানেক পরে সে সম্পূর্ণ মুস্থ হইয়া উঠিল। শুনিলাম তার বাড়ী পাটনা । গালার চাষ করিবার উদেখে সে এঅঞ্চলে কুলের জঙ্গলের অনুসন্ধান করিতে পূর্ণিয়া হইতে রওনা হইয়াছে আজ দুই দিন পূৰ্ব্বে । তার পর দুপুরের সময় আমাদের মহালে ঢুকিয়াছে, এবং একটু পরে দিগভ্রান্ত হইয়া পড়িয়াছে, কারণ এ রকম একঘেয়ে একই ধরণের গাছে-ভরা জঙ্গলে দিক ভুল করা খুব সোজা, বিশেষত বিদেশী লোকের পক্ষে। কালকার ভীষণ উত্তাপে ও গরম পশ্চিমে বাতাসের দমকার মধ্যে