পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক •©ፃ ফিরিবার সময় সভ্য লোকালয়কে বহুদূর পিছনে ফেলিয়া, মুকুনি চাকলাদারের হাতের বাবলাকাঠের খুঁটির পাশ কাঠাইরা যখন নিজের জঙ্গলের সীমানায় চুকি, তখন মুদুরবিসপী নিবিড়তাম বনানী, প্রাস্তর, শিলাস্তুপ, বনটিয়ার বর্ণক, নীল গাইয়ের জেরা, স্বৰ্য্যালোক, ধরণীর মুক্ত প্রসার আমার একেবারে একমুহূৰ্ত্তে অভিভূত করিয়া দেয়। পঞ্চম পরিচ্ছেদ X খুব জ্যোৎস্না, তেমনি হাডর্কাপানো শীত। পৌষ মাসের শেষ । সদর কাছারি হইতে লবটুলিয়ার ডিহি কাছারিতে তদারক করিতে গিয়াছে। লবটুলিয়ার কাছারিতে রাত্রে রান্না শেষ হইয়া সকলের আহারাদি হইতে রাত এগারটা বাজিয়া যাইত। একদিন খাওয়া শেষ করিয়া রান্নাঘর হইতে বাহিরে আসিয়া দেখি, তত রাত্রে আর সেই কনকনে হিমবর্ষী আকাশের তলায় কে একটি মেয়ে ফুটফুটে জ্যোৎস্নায় কাছারির কম্পাউণ্ডের সীমানায় দাডাইয়া আছে। পাটোয়ারীকে জিজ্ঞাসা করিলাম—ওখানে কে দাড়িয়ে ? পাটেয়ারী বলিল—ও কুন্তা। আপনার আসবার কথা শুনে আমায় কাল বলছিল— ম্যানেজারবাবু আসবেন, তার পাতের ভাত আমি গিয়ে নিয়ে আসবে। আমার ছেলেপুলের বড় কষ্ট। তাই বলেছিলাম—যাস । কথা বলিতেছি, এমন সময় কাছারির টহলদার বলেীয়া আমার পাতের ডালমাখা ভাত, ভাঙা মাছের টুকরা, পাতে। গোড়ায় ফেলা তরকারী ও ভাত, দুধের বাটির ভুক্তাবশিষ্ট দুধভাত—সব লইয়া গিয়া মেয়েটির আনীত একটা পেতলের কানাউচু থালায় ঢালিয়া দিল। মেয়েটি চলিয়া গেল । আট-দশ দিন সেবার লাটুলিয়া কাছারিতে ছিলাম, প্রতিরাত্রে দেখিতাম ইদারার পাড়ে সেই মেয়েটি আমার পাতের ভাতের জন্য সেই গভীর রাত্রে আর সেই ভয়ানক শীতের মধ্যের বাহিরে শুধু আঁচল গায়ে দিয়া দাড়াইয়া আছে। প্রতিদিন দেখিতে দেখিতে একদিন কৌতুহলবশে পাটােয়ারীকে জিজ্ঞাসা ঋ tাম—কুন্তী—যে রোজ ভাত নিয়ে যায়, ও কে, আর এই জঙ্গলে থাকেই বা কোথায় ? দিনে তো কখনও দেখি নে ওকে ? পাটোয়ারী বলিল—বলছি হুজুর। ঘরের মধ্যে সন্ধ্যা হইতে কাঠের গুড়ি জালাইয়া গনগনে আগুন করা হইয়াছে—তারই ধারে চেয়ার পতিয়া অনেকক্ষণ ধরিয়া বসিয়া কিস্তির আদায়ী হিসাব মিলাইতেছিলাম। আহারাদি শেষ করিয়া আসিয়া মনে হইল একদিনের পক্ষে কাজ যথেষ্টই করিয়াছি। কাগজপত্র গুটাইয়া পাটোয়ারীর গল্প শুনিতে প্রস্তুত হইলাম। —শুমুন হুজুর। বছর দশেক আগে এ অঞ্চলে দেবী সিং রাজপুতের বড় রবরব ছিল।