পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 বিভূতি-রচনাবলী দশটা কালী সিগারেট কিনিতেছে, ছেলে মেয়েরা তিলুয়া, রেউড়ি, রামদানার লাড ও তেলেভাজা খাজা কিনিয়া খাইতেছে। হঠাৎ মেয়েয়াহুষের গলায় আৰ্ত্ত কান্নার স্বর শুনিয়া চমকিয়া উঠিলাম। একটা উচু পাহাড়ী ভাঙায় যুৱক-যুবতীর ভিড় করিয়া দাড়াইয়া হাসি-খুশী গল্প-গুজব আদর-আপ্যায়নে মত্ত ছিল—কান্নাট উঠিল সেখান হইতেই। ব্যাপার কি ? কেহ কি হঠাৎ পঞ্চত্তপ্রাপ্ত হইল ? একজন লোককে জিজ্ঞাসা করিয়া জানিলাম, তা নয়, কোনও একটি বন্ধুর সহিত তার পিত্রালয়ের গ্রামের কোনও মেয়ের সাক্ষাৎ হইয়াছে—এদেশের রীতিই নাকি এইরূপ, গ্রামের মেয়ে বা কোনও প্রবাসিনী সখী, কুটুম্বনী বা আত্মীয়ার সঙ্গে অনেকদিন পরে দেখা হইলেই উভয়ে উভয়ের গলা জড়াইয়া মড়াকান্না জুড়িয়া দিবে। অনভিজ্ঞ লোকে ভাবিতে পারে উহাদের কেহ মরিয়া গিয়াছে, আসলে ইহা আদর-আপ্যায়নের একটা অঙ্গ। না কাদিলে নিন্দ হইবে । মেয়ের বাপের বাড়ীর মানুষ দেখিয়া কঁদে নাই—অর্থাৎ তাহা হইলে প্রমাণ হয় যে, স্বামিগুহে বড় মুখেই আছে—মেয়েমানুষের পক্ষে ইহা না কি বড়ই লজ্জার কথা । এক জায়গায় বইয়ের দোকানে চটের থলের উপর বই সাজাইয়া বসিয়াছে—হিন্দী গোলেৰকাউলী, লয়লা-মজনু, বেতাল পচিশী, প্রেমসাগর ইত্যাদি। প্রবীণ লোকে কেহ কেহ বই উন্টাইয়া-পাণ্টাইয়া দেখিতেছে—বুঝিলাম বুকস্টলে দণ্ডায়মান পাঠকের অবস্থা আনার্তোল ফ্রাসের প্যারিসেও যেমন, এই বন্য দেশে কড়ারী তিনটাঙার হোলির মেলাতেও তাহাই। বিনা পয়সায় দাড়াইয়া পড়িয়া লইতে পারিলে কেহ বড়-একটা বই কেনে না । দোকানীর ব্যবসাবুদ্ধি কিন্তু বেশ প্রখর, সে জনৈক তন্ময়চিত্ত পাঠককে জিজ্ঞাসা করিল— কেতাব কিনবে কি ? না হয় তো বেথে দিয়ে অন্য কাজ দেখ । মেলার স্থান হইতে কিছুদূরে একটা শালবনের ছায়ায় অনেক লোক রাধিয়া থাইতেছে—ইহাদের জন্য মেলার এক অংশে তরিতরকারীর বাজার বসিয়াছে, কাচা শালপাতার ঠোঙায় শুটকী কুচো চিংড়ী ও নীলসে পিপডের ডিম বিক্রয় হইতেছে। লাল পিপড়ের ডিম এখানকার একটি প্রিয় মুখাদ্য । তা ছাড়া আছে কাচা পেঁপে, শুকনো কুল, কেঁদ-ফুল, পেয়ার ও বুনো শিম। হঠাৎ কাহার ডাক কানে গেল—ম্যানেজারবাবু।– চাহিয়া দেখি ভিড় ঠেলিয়া লবটুলিয়ার পাটোয়ারীর ভাই ব্ৰহ্মা মাহাতে আগাইয়া আসিতেছে —হুজুর, আপনি কথন এলেন ? সঙ্গে কে ? 3. বলিলাম—ব্রহ্মা এখানে কি মেলা দেখতে ? —ন হুজুর, আমি মেলার ইজারাদার। আমুন, অস্বিন, আমার তাঁবুতে চলুন একটু পায়ের ধূলো দেবেন। মেলার একপাশে ইজারাদারের তাবু, সেখানে ব্ৰহ্ম খুব খাতির করিয়া আমার লইয়া গিয়া একখানা পুরনো বেণ্টউড চেয়ারে বসাইল। সেখানে একজন লোক দেখিলাম, আমন লোক বোধ হয় পৃথিবীতে আর দেখিব না। লোকটি কে জানি না, ব্ৰহ্মা মাহাতোর কোন