পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

.আরণ্যক Q○ আসিল । খুব খুশী, বলিল, খুব বড় বড় ঘাস হুজুর, বহুৎ আচ্ছ জঙ্গল । হুজুরের মেহেরবানি না হলে আমন জঙ্গল মিলত না । * রামচন্দ্র ও অসিরফি টিণ্ডেলের কথা তখন আমার মনে ছিল না, থাকিলেও বৃদ্ধের নিকট তাহা হয়ত বলিতাম না। কারণ, ভষ পাইয়। সে ভাগিয়া গেলে জমিদারের লোকসান । স্থানীয় লোকের কেহই ও জঙ্গল ইজারা লইতে ঘেঁষে না, রামচন্দ্র আমীনের সেই ব্যাপারের পরে। মাসখানেক পরে বৈশাখের গোডায় একদিন বৃদ্ধ লোকটি কাছারিতে আসিয়া হাজির, মহা রাগত ভাব, তার পিছনে সেই ছেলেটি কাচুমাচ ভাবে দাড়াইয়া । বলিলাম—কি ব্যাপার ? বুদ্ধ রাগে কঁাপিতে কঁাপিতে বলিল –এই বঁ}দরটাকে নিয়ে এলাম হুজুরের কাছে দরবার করতে। ওকে আপনি পা থেকে খুলে পচিশ জুতো মাকন, ও জবা হয়ে যাক । —কি হয়েছে কি ? —হুজুরের কাছে বলতে লজ্জা করে। এই বাদর, এখানে এসে পৰ্য্যস্ত বিগড়ে যাচ্ছে। আমি সাত-আট দিন প্রায়ই লক্ষ্য করছি—লঙ্গল করে বলতে হুজুর—প্রায়ই মেয়েমানুষ ঘর থেকে বার হয়ে যায়। একটা মাত্র খুপরি হাত-অষ্টেক লম্বা, ঘাসে ছাওয়া, ও আর আমি দু-জনে শুই । আমার চোখে ধূলো দিতে পারাও সোজা কথা নয়। দু-দিন যখন দেখলাম তথন ওকে জিগ্যেস করলাম, ও একেবারে গাছ থেকে পডল হুজুর। বলে—কই, আমি তো কিছুষ্ট জানি নে ! আরও দু-দিন যখন দেখলাম, তখন একদিন দিলাম আচ্ছা করে ওকে মার। চোখের সামনে বিগড়ে যাবে ছেলে ? কিন্তু তার পরেও যখন দেখলাম, এই পরশু রাত্রেই হুজুৰ—তখন ওকে আমি হুজুরের দরবারে নিয়ে এসেছি, হুজুর শাসন করে দিন । হঠাৎ রামচন্দ্র আমীনের ব্যাপারটা মনে পড়িয়া গেল। জিজ্ঞাসা করিলাম—কত রাত্রে দেখেছ ? —প্রণয়ষ্ট শেষরাত্রের দিকে হুজুর। এই রাতের দু-এক ঘডি বাকি থাকতে । —ঠিক দেখেছ, মেয়েমানুষ ? —হুজুর, আমার চোখের তেজ এখনও তত কম হয়নি । জরুর মেয়েমানুষ, বয়সেও কম, কোনদিন পরনে সাদা ধোয়া শাড়ী, কে, দিন বা লাল, কোনদিন কালো । একদিন মেয়েমানুষটা বেরিয়ে যেতেই আমি পেছন পেছন গেলাম। কাশের জঙ্গলের মধ্যে কোথায় পালিয়ে গেল, টের পেলাম না। ফিরে এসে দেখি, ছেলে আমার যেন খুব ঘুমের ভান করে পড়ে রয়েছে, ডাকতেই ধডমড় করে ঠেলে উঠল, যেন সন্ত ঘুম ভেঙে উঠল । এ রোগের ওষুধ কাছারি ভিন্ন হবে না বুঝলাম, তাই হুজুরের কাছে— ছেলেটিকে আডালে লইয়া গিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম— সব কি শুনছি তোমার নামে ? ছেলেটি আমার পা জড়াইয়া ধরিয়া বলিল—আমার কথা বিশ্বাস করুন হুজুর । আমি এর বিন্দুবিসর্গ জানি না । সমস্ত দিন জঙ্গলে মহিষ চরিয়ে বেড়াই—রাতে মড়ার মত ঘুমুই,