পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@や বিভূতি-রচনাবলী হইল এ অনেক আশা করিয়া ধরমপুর পরগণা হইতে এতদূর আসিয়াছে জমির লোভে, জমি না পাইলে কিছু না বলিয়াই ফিরিয়া যাইবে বটে, কিন্তু বড়ই আশাভঙ্গ ও ভরসাহারা হইয়া ফিরিবে । রাজুকে দু-বিঘা জমি লবটুলিয়া বইহারের উত্তরে ঘন-জঙ্গলের মধ্যে বন্দোবস্ত দিলাম, এক রকম বিনামূল্যেই। বলিয়া দিলাম, জঙ্গল পরিষ্কার করিয়া সে আবাদ করুক, প্রথমে দু বৎসর কিছু লাগিবে না, তৃতীয় বৎসর হইতে চার আনা বিঘাপিছু খাজনা দিতে হইবে। তখনও বুঝি নাই কি অদ্ভুত ধরণের মানুষকে জমিদারীতে বসাইলাম। রাজু আসিল ভাদ্র কি আশ্বিন মাসে, জমি পাইয়া চলিয়াও খেল, তাহার কথা বহু কাজের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে ভুলিয়া গেলাম। পর বৎসর শীতের শেয়ে হঠাৎ একদিন লবটুলিয়া কাছারি হইতে ফিরিতেছি, দেখি একটি গাছতলায় কে বসিয়া কি একথান বই পড়িতেছে । আমাকে দেখিয়া লোকটি বই মুড়িয়া তাড়াতাড়ি উঠিয় দাড়াইল । আমি চিনিলাম, সেই রাজু পড়ে । কিন্তু আর-বছর জমি বন্দোবস্ত দেওয়ার পর লোকট। একবার ও কাছারিমুখে হইল না, এর মানে কি ? বলিলাম—কি রাজু পাডে, তুমি আছ এখানে ? আমি ভেবেছি তুমি জমি ছেড়ে-ছুড়ে চলে গিয়েছ বোধ হয় । চাষ করনি ? দেখিলাম, ভয়ে রাজুর মুখ শুকাইয়া গিয়াছে। আমতা অমিতা করিয়া বলিল, হ্যা, হুজুর, —চাষ কিছু -এবার হুজুৰ— আমার কেমন রাগ হইয়া গেল। এই সব লোকের মুর্থ বেশ মিষ্টি, লোক ঠকাইয়া গায়ে হাত বুলাইয়া কাজ আদায় করিতে বেশ পটু ৷ বলিলাম—বেড় বছর তোমার চুলের টিকি তো দেখা যায় নি। দিব্যি স্টেটকে ঠকিয়ে ফসল ঘরে তুলছ—কাছারির ভাগ দেওয়ার যে কথা ছিল, তা বোধ হয় তোমার মনে নেই ? রাজু এবার বিস্ময়পূর্ণ বড় বড় চোখ তুলিয়া আমার দিকে চাহিয়া বলিল—ফসল হুজুর ? কিন্তু সে তো ভাগ দেবার কথা আমার মনেষ্ট ওঠে নি—সে চীন ঘাসের দান— কথাটা বিশ্বাস হইল না । বললাম-চীনার দীন খচ্ছি এই ছ-ম{স ? অন্ত ফসল নেই ? কেন, মকাই কর নি ? —ন হুজুৰ, বড় গজার জঙ্গল । এক মানুষ, ভরসা করে উঠতে পারি নি। পনের কাঠা জমি অতিকষ্টে তৈরি করেছি। আমুন না হুজুর, একবার দয়া করে পায়ের ধুলো দিয়ে যান । রাজুৰ পিছনে পিছনে গেলাম। এত ঘন জঙ্গল মাঝে মাঝে যে, ঘোড়ার ঢুকিতে কষ্ট হইতেছিল। খানিক দূর গিয়া জঙ্গলের মধ্যে গোলাকার পরিষ্কার জায়গা প্রায় বিঘাখানেক, মাঝখানে জংলী ঘাসেরই তৈরী ছোট নীচু দুখান খুপরি । একপানাতে রাজু থাকে, আর একখানায় তার ক্ষেতের ফসল জমা আছে। থলে কি বস্তা নাই, মাটির নীচু মেঝেতে রাণীকৃত চীনা ঘাসের দানা স্তুপীকৃত করা। বলিলাম-রাজু, তুমি এত আলসে কুঁড়ে লোক তা তো জানতুম না, দেড় বছরের মধ্যে দু-বিঘের জঙ্গল কাটতে পারলে না ?