পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক ማ» —কি করবে সেখানে গিয়ে ? —কখনও কলকাতায় যাই নি, শুনেছি সেখানে গাওনা বাজনা নাচের বড় আদয়। ভাল ভাল নাচ শিখেছিলাম,কিন্তু এখানে দেখবার লোক নেই, তাতে বড় দুঃখ হয় । ছদ্ধরবাজি নাচটা না নেচে ভুলে যেতে বসেছি ? উঃ, কি করেই ওই নাচটা শিখি ! সে কথা শোনার জিনিস । গ্রামটা ছাড়াইয়াছিলাম। ধুধু জ্যোৎস্নালোকিত মাঠ। ভাবে বোধ হইল ধাতুরিয়া লুকাইয়া আমার সহিত দেখা করিতে চায়, রাসবিহারী সিং টের পাইলে শাসন করিবে এই ভরে। নিকটেই মাঠের মধ্যে একটা ফুলে-ভৰ্ত্তি শিমুল চার। ধাতুরিয়ার কথা শুনিয়া শিমূল গাছটার তলায় ঘোড়া হইতে নামিয়া একখও পাথরের উপর বসিলাম। বলিলাম—বল তোমার গল্প । —সবাই বলত গয়া জেলায় এক গ্রামে ভিটলদাস বলে একজন গুণীলোক আছে, সে ছক্করবাজি নাচের মস্ত ওস্তাদ। আমার বেীক ছিল ছক্করবাজি যে করে হোক শিখবই। গয়া জেলাতে চলে গেলাম, গায়ে গারে ঘুরি আর ভিটলদাসের খোজ করি। কেউ বলতে পারে না । শেষকালে একদিন সন্ধ্যার সময় একটা আহীরদের মহিষের বাথানে আশ্রয় নিয়েছি সেখানে শুনলাম ছক্করবাজি নাচ নিয়ে তাদের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে । অনেক রাত্ত তখন, শীতও খুব । আমি বিচালি পেতে বাথানের এক কোণে শুয়ে ছিলাম, যেমন ছক্করবাজির কথা কানে যাওয়া আমনি লাফিয়ে উঠেছি। ওদের কাছে এসে বসি । কি খুশীই যে হলাম বাবুজী সে আর কি বলব! যেন একটা কি তালুক পেরে গিয়েছি! ওদের কাছে ভিটলদাসের সন্ধান পেলাম। ওখান থেকে সতের ক্রেশ রাস্ত তিনটাঙ বলে গ্রামে র্তার বাড়ী । বেশ লাগিতেছিল একজন তরুণ শিল্পীর শিল্পশিক্ষার আকুল আগ্রহের গল্প। বলিলাম, তার পর ? —হেঁটে সেখানে গেলাম। ভিটলদাস দেখি বুড়ো মানুষ। একমূখ সাদা দাড়ি। আমার দেখে বললেন—কি চাই ? আমি বললাম—আমি ছক্করবাজি নাচ শিখতে এসেছি। তিনি যেন অবাক হয়ে গেলেন । বললেন—আজকালকার ছেলেরা এ পছন্দ করে? এ তো লোকে ভূলেই গিয়েছে। আমি তার পায়ে হাত দিয়ে বললাম—আমার শেখাতে হবে, বহুদূর থেকে আসছি আপনার নাম শু, তার চোখ দিয়ে জল এল। বললেন—আমার বংশে সাতপুরুষ ধরে এই নাচের চর্চা। কিন্তু আমার ছেলে নেই, বাইরের কেউ এসে শিখতেও চায় নি আমার এত বয়স হয়েছে, এর মধ্যে। আজ তুমি প্রথম এলে। আচ্ছা, তোমার শেখাব. তা বুঝলেন হজুৰ, এত কষ্ট করে শেখা জিনিস। এখানে গাঙ্গোতাদের দেখিয়ে কি ? করব ? কলকাতায় গুণের আদ্রর আছে। সেখানে নিয়ে যাবেন, হুজুর ? বলিলাম—আমার কাছারিতে একদিন এসে ধাতুরিয়া, এ-সম্বন্ধে কথা বলব। ধাতুরিয়া আখন্ত হইয়া চলিয়া গেল।