পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আরণ্যক १४ আমি সপ্তর্ষিমণ্ডল দেখিয়া ধ্রুবতারা ঠিক করিলাম—পূর্ণর আমাদের মহাল হইতে খাড়া উত্তরে, তবে ঠিক আছি, মুজনকে বুঝাইয়া বলিলাম। সুজন বলিল-না হুজুৰ, কুশীনদীর থেয়া পেরুতে হবে যে, খেয়া পার হয়ে তবে সোজা উত্তরে যেতে হবে । এখন উত্তর-পূৰ্ব্ব কোণ কেটে বেরুতে হবে। অবশেষে পথ মিলিল । জ্যোৎস্না আরও ফুটিয়াছে—সে কি জ্যোৎস্না ! কি রূপ রাত্রির! নির্জন বালুর চরে, দীর্ঘ বনবাউয়ের জঙ্গলের পাশের পথে জ্যোৎস্ন! যাহারা কখনও দেখে নাই, তাহারা বুঝিবে না এ জ্যোৎস্নার কি চেহারা এমন উন্মুক্ত আকাশতলে—ছায়াহীন উদাসগভীর জ্যোৎস্নাভরা রাত্রিতে, বন-পাহাড-প্রান্তরের পথের জ্যোৎস্না, বালুচরের জ্যোৎস্না-ক'জন দেখিয়াছে ? উঃ সে কি ছুট! পাশাপাশি চলিতে চলিতে দুই ঘোড়াই ইপিাইতেছে, শীতেও ঘাম দেখা দিয়াছে আমাদের গায়ে । এক জায়গায় বনের মধ্যে একটা শিমুলগাছের তলায় আমরা ঘোড়া থামাইয়া একটু বিশ্রাম করি, সামান্ত মিনিট-দশেক। একটা ছোট নদী বহিয়া গিয়া অদূরে কুশীনদীর সঙ্গে মিশিয়াছে, শিমুলগাছটাতে ফুল ফুটয়াছে, বনটা সেখানে চারিধার হইতে আসিয়া আমাদের এমন ঘিরিয়াছে যে, পথের চিহ্নমাত্র নাই, অথচ খাটো থাটো গাছপালার বন-শিমুল গাছটাই সেখানে খুব উচু -বনের মধ্যে মাথা তুলিয়া দাড়াইয়া আছে। দুজনেরই জল-পিপাসা পাইয়াছে দারুণ । জ্যোৎস্না মান হইয়া আসে। অন্ধকার বনপথ, পশ্চিম দিগন্তের দূর শৈলমালার পিছনে শেযরাত্রির চন্দ্র ঢলিয়া পড়িয়াছে। ছায়া দীর্ঘ হইয়া আসিল, পার্থী-পাথালীর শব্দ নাই কোন দিকে, শুধু ছায়া, ছায়া, অলকার মাঠ, অন্ধকার বন। শেষরাত্রির বাতাস বেশ ঠাও হইয় উঠিল। ঘড়িতে রাত প্রায় চারটা । ভয় হয়, শেষ-রাত্রের অন্ধকারে বুনো হাতীর দল সামনে না আসে । মধুবনীর জঙ্গলে 'ক পাল বুনো হাতীও আছে। এবার আশে-পাশে ছোট ছোট পাহাড়, তার মধ্য দিয়া পথ, পাহাড়ের মাথায় নিম্পত্ৰ শুভ্রকাগু গোলগোলি ফুলের গাছ, কোথাও রক্তপলাশের বন । শেষ-রাত্রের চাদ-ডোব অন্ধকারে বন-পাহাড় অদ্ভুত দেখায়। পূর্ব দিকে ফসর্ণ হইয়া আসিল—ভোরের হাওয়া বহিতেছে, পাখীর ডাক কানে গেল। ঘোড়ার সর্বাঙ্গ দিয়া দর-দর-ধারে ঘাম ছুটিতেছে, ছুট, ছুট, খুব ভাল ঘোড়া তাই এই পথে সমানে এত ছুটিতে পারে। সন্ধ্যায় কাছারি ছাড়িয়াছি—আর ভোর হইয়া গেল । সম্মুখে এখনও যেন পথের শেষ নাই, সেই একঘেয়ে বন, পাহাড় । 哆 সামনের পাহাড়ের পিছন থেকে টকটকে লাল সিদ্বরের গোলার মত স্বৰ্য উঠতেছে। পথের ধারে এক গ্রামে ঘোড়া থামাইয়া কিছু দুধ কিনিয়া দুজনে খাইলাম। পরে আরও ঘণ্টা-দুই চলিয়াই পূর্ণিয়া শহর । পুর্শিয়ার স্টেটের কাজ তো শেষ করিলাম, সে যেন নিতান্ত অন্তমনস্কতার সহিত, মন