পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԵՀ বিভূতি-রচনাবলী মাথা আলো করিয়া রাথিয়াছে। অতি চমৎকার মুদ্রাণ, অনেকটা যেন প্রস্ফুটিত সর্ষে ফুলের মত—তবে অতটা উগ্র নয়। সরস্বতী কুণ্ডীর বনে কত বন্ত শিউলি গাছ—শিউলি গাছের প্রাচুর্য্য এক এক জায়গায় এত বেশী, যেন মনে হয় শিউলির বন । বড় বড় শিলাখণ্ডের উপর শরতের প্রথমে সকালবেল রাশি রাশি শিউলি ফুল ঝরিয়া পড়িয়াছিল—দীর্ঘ এক রকম কর্কশ ঘাস সেই সব পাথরের আশে-পাশে—বড় বড় ময়না-কাটার গাছ তার সঙ্গে জড়াইয়াছে—কাটা, ঘাস, শিলাখণ্ড সব তাতেই রাশি রাশি শিউলি ফুল—আর্দ্র, ছায়াগহন স্থান, তাই সকালের ফুল এখনও শুকাইয়া যায় নাই । সরস্বতী হ্রদকে কত রূপেই দেখিলাম ! লোকে বলে সরস্বতী কুঞ্জীর জঙ্গলে বাঘ আছে, জ্যোৎস্না-রাত্রে সরস্বতীর বিস্তৃত জলরাশির কৌমুদীক্ষাত শোভা দেখিবার লোভে রাসপূর্ণিমার দিন তহশীলদার বনোয়ারলালের চোখে ধূলা দিয়া আজমাবাদের সদর কাছারি আসিবার ছুতায় লবটুলিয়া ডিহি কাছারি হইতে লুকাইয়া এক ঘোড়ায় এখানে আশিয়াছি। বাঘ দেখি নাই বটে, কিন্তু সেদিন আমার সত্যই মনে হইয়াছিল এখানে মায়াবিনী বনদেবীরা গভীর রাত্রে জ্যোৎস্নাক্ষাত হ্রদের জলে জলকেলি করিতে নামে । চারিধার নীরব নিস্তব্ধ-পূর্ব তীরের ঘন বনে কেবল শৃগালের ডাক শোনা যাইতেছিল—দূরের শৈলমালা ও বনশীৰ্ষ অস্পষ্ট দেখাইতেছে—জ্যোৎস্নার হিম বাতাসে গাছপালা ও ভোমরা লতার নৈশ-পুষ্পের মৃদু মুবাস , আমার সামনে বন ও পাহাড়ে বেষ্টিত নিস্তরঙ্গ বিস্তীর্ণ হ্রদের বুকে হৈমন্তী পূর্ণিমার থৈ থৈ জ্যোৎস্না পরিপূর্ণ, ছায়াহীন, জলের উপর পড়া, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বীচিমালায় প্রতিফলিত হওয়া অপার্থিব দেবলোকের জ্যোৎস্না-ভোম্রা লতার সাদা-ফুলেছাওয়া বড় বড় বনস্পতিশীর্ষে জ্যোৎস্না পড়িয়া মনে হইতেছে গাছে গাছে পরীদের শুভ্র বস্ত্র আর এক ধরণের পোকা একঘেয়ে ডাকিতেছিল—ঝিঝি পোকার মতই। দু-একটা পত্র পতনের শব্দ বা খস খস করিয়া শুষ্ক পত্ররাশির উপর দিয়া বন্য জন্তুর পলায়নের শব্দ. বনদেবীরা আমরা থাকিতে তো আর আসে না ! কত গভীর রাত্রে আসে কে জানে । আমি বেশী রাত পৰ্য্যন্ত হিম সহ করিতে পারি নাই । ঘণ্টাখানেক থাকিয়াই ফিরি। সরস্বতী কুণ্ডীর এই পরীদের প্রবাদ এখানেই শুনিয়াছিলাম। শ্রাবণ মাসে একদিন আমাকে উত্তর সীমানার জরীপের ক্যাম্পে রাত্রি যাপন করিতে হয়। আমার সঙ্গে ছিল আমীন রঘুবর প্রসাদ । সে আগে গবর্নমেন্টের চাকুরি করিয়াছে, মোহনপুর রিজার্ভ ফরেস্টে ও এ-অঞ্চলের বনের সঙ্গে তার পচিশ-ত্রিশ বছরের পরিচয় । তাহার কাছে সরস্বতী কুণ্ডীর কথা তুলিতেই সে বলিল—হুজুর, ও মায়ার কুণ্ডী, ওখানে রাত্রে হুরী-পরীরা নামে ; জ্যোৎস্নারাত্রে তারা কাপড় খুলে রাখে ডাঙায় ঐ সব পাথরের উপর, রেখে জলে নামে। সে-সময় যে তাদের দেখতে পায়, তাকে ভুলিয়ে জলে নামিয়ে ডুবিয়ে মারে /যোগ মধ্যে দেখা যার মাঝে মাঝে পরীদের মুখ জলের উপরে পদ্ম-ফুলের