পাতা:বিভূতি রচনাবলী (প্রথম খণ্ড).djvu/৪৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্মৃতিীয় 6ቋማከ 8S) উঠলাম। জ্যোৎ মাউঠেছে, পাতার কাক দিয়ে জ্যোৎস্না পড়েছে-এই পাশের তালতলায় গত কাজে মাসে কল্পনা করেছিলাম দুৰ্গায় তাল কুড়ানো, শৈশবে তাল পড়ে থাকলে গাছতলায় কি আনন্দ হোত । কি অপূৰ্ব আশ্ৰ-বউলের গন্ধ মাখা জ্যোৎ মা রাত্রিটা। সঁাকোটার উপর অনেকক্ষণ ব’লৈ গায় ক’রে স্টেশনে এলাম । কবিরাজ মহাশয়ের সঙ্গে অনেককাল পরে দেখা -তিনি সংকীৰ্ত্তন করতে যাচ্ছেন স্টেশনের বাসায়। বাজারে একটা শার্ট কিনে গ্রামোফোনের দোকানে রবি ঠাকুরের আবৃত্তি শুনলাম-আজি হ’তে শতবৰ্য পরে। বৃদ্ধ কবিবরের গভীর গলায়। উদাত্ত সুর বড় ভাল লাগল। তারপরে চওঁীবাবু চ’লে গেল তার বাষ্ঠী, আমি আসতে আসতে পথে তোলাবাবুর সঙ্গে দেখা। ভোলাবাৰু দীপবাবুর বাড়ী যাচ্ছেন Electric fitting-এর Canvass করতে। তঁকে বললাম, দীপবাবু এখন ৰীজ খেলতে ব্যস্ত, সকালে of : দিনটা বেশ কাটল । I ker kvari), 3 sa v সকালে মায়েবের সঙ্গে গেলাম কমলাকুণ্ডু। বেশ ঘোড়া ছুটিয়ে সকালের হাওয়ায় স্নপচুয় ক্ষেতের পাশ দিয়ে দিয়ে গেলাম। কয়েকদিনের জড়তাটা কেটে গেল। ক্ষেতে ক্ষেতে ঘব পেকেছে। পাকা ফসলের সুগন্ধ চারধার থেকে পাওয়া যাচ্ছে । কখনো আমি ঘোড়া ছোটাই কখনো নায়েব মহাশয় ঘোড়া ছোেটান । ফুলকিয়ায় সীমানা ছাড়িয়েই জঙ্গল থেকে একটা বুনো মহিষ বার হ’ল। সেটার মূৰ্ত্তি দেখেই আমি বললাম, এটা মারতে পারে, ঘোড়া ঘোরান মশাই। খুর দিয়ে মাটি খুড়ে সেটা শিং নেড়ে লাল চোথে আমাদের দিকে চাইতে লাগলো। যদি তেড়ে মায়াতে আসে-দু’জনে ঘোড়া ফিরিয়ে চালিয়ে খানিকটা এসে আবার দাড়িয়ে গেলাম-ততক্ষণ মহিষাটা চলে গিয়েছে। তারপর আমরা ঘোড়া ফিরিয়ে কমলাকুণ্ডু পৌঁছলাম। খুব রোদ চ’ড়েছে, কলািবলিয়াতে স্নান করতে এলাম। ঠাণ্ডা &লে নাইতে নাইতে ভাবছিলাম -ঐ আমাদের গ্রামের ইছামতী নদী। আমি একটা ছবি বেশ মনে করতে পারি।--এই রকম ঘূৰ্য বালিয়াড়ী, পাহাড় নয়, শান্ত, ছোট, দ্বিন্ধ ইছামতীর দু’পাড় ভরে ঝোপে কোপেকত বনকুসুম, কত ফুলে ভরা খোটুবন, গাছপালা, গাঙশালিকের বাসা, সবুজ তৃণাচ্ছাদিত মাঠ। গাঁয়ে গাঁয়ে গ্রামের ঘাট, আকন্দ ফুল। গত পাঁচশত বৎসর ধীরে কত ফুল ঝরে পড়ছে-- কত পাখী কৃত বনৰোপ আসছে যাচ্ছে। দ্বিন্ধ পাটা শোগুলার গন্ধ বার হয়, জেলেয়া জাল ফেলে, ধীরে ধীরে কত গৃহন্থের বাষ্ঠী। কত হাসিকান্নার মেলা। আজ পাঁচশত বছর ধরে কত গৃহস্থ এল, কত হাসিমুখ শিশু প্ৰথম মা. র সঙ্গে নাইতে এল-কত্ত বৎসর পরে বুদ্ধাবস্থায় তার স্মশানশষ্যা হ’ল ঐ ঠাণ্ড জলের কিনায়াতেই, ঐ বঁাশবনের ঘাটের নীচেই। কত কত মা, কত ছেলে, কত তরুণ তরুণী সময়ের পাষাণবন্ধু বেয়ে এসেছে গিয়েছে মহাকালের বীথিপথ বেয়ে। ঐ শান্ত নদীর ধারে ঐ আকােদ ফুল, ঐ পাটা শেওলা, বনঝোপ, ছাতিমবন। এদের গল্প লিখবো, নাম হবে ইছামতী।