পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দুহোটেল ©Ꮡ না। মেয়ের, যারা গান শুনতে এসেছিল, সবাইকে না খাইয়ে যেতে দেবেন না। একটু দেরি হবে। না হয় আপনি যান, আমি কি’র সঙ্গে পাঠিয়ে দেব এখন। হরিচরণবাবু বলিলেন —তোমার যদি বিশেষ কাজ না থাকে, একটু বসে যাও না হাজারি । তোমার সঙ্গে ছুটো কথা কই। কেউ বড় একটা আসে না আমার এখানে— । হাজারি বসিল । —তুমি কোথায় কোন হোটেলে কাজ কর । —আঙ্গে রাণাঘাট, বেচু চক্কত্তির হোটেলে, রেল-বাজারের মধ্যে। —ক’ত মাইনে পাও ? —বাবু সে আর বলবার কথা নয়, খাওয়া আর সাত টাকা মাসে। তাই ভাবছিলাম পরের তাবে থাকবো না । এদিকে বয়স হলো, এইবার একটা হোটেল খুলে নিজে চালাবো । —হোটেল চালাতে পারবে ? —তা বাবু আপনার আশীৰ্ব্বাদে একরকম সবই জানি ও-লাইনের। বাজার আর রান্না, হোটেলের দুটো মস্ত কাজ, এ যে শিখেচে, সে হোটেল খুলে লাভ করতে পারে । আমি অনেকদিন থেকে চেষ্টা ক'রে ও দুটো কাজ শিখে নিইfচ-খদের কি চায় তাও জানি । চাকরি করি রাধুনীর বটে বাবু কিন্তু আপনার বাপ-মায়ের আশীৰ্ব্বাদে, আপনার আশীৰ্ব্বাদে চোখ-কান খুলে কাজ করি । —বেশ ভাল । উৎসাহ পাইয়া হাজারি তাহার বহুদিনের আশা ও সাধ একটি আদর্শ হিন্দুহোটেল' প্রতিষ্ঠা সম্বন্ধে অনেক কথা বলিল। চুণানদীর ধারে বসিয়া অবসর মুহূর্তে তাহার সে স্বপ্ন দেখার কথাও গোপন করিল না। তাহার রান্না খাইয়া কলিকাতার বাবুরা কি রকম মুখ্যাতি করিয়াছে, ধদু বঁড়িয্যের হোটেলে তাহাকে ভাঙ্গাইয়া লইবার চেষ্টা, কিছুই বাদ দিল না । হরিচরণবাবু বলিলেন—দেখ হাজারি, তোমার কথা শুনে তোমার ওপর আমার হিংসে হয়। তোমার বয়েস হোলে কি হবে, তোমার জীবনে মস্ত বড় আশা রয়েচে একটা কিছু গড়ে তুলবে! এই আশাই মানুষকে বাচিয়ে রাখে, আমার ছেলেট মারা যাওয়ার পর আমার জীবনে যেন সব-কিছু ফুরিয়ে গিয়েছে মনে হয়। আর ধেন কিছু করবার নেই, ক’রে কি হবে, কার জন্যে করবো এই সব কথা মনে ওঠে । তা ছাড়া জীবনে কখনোই কিছু দরকার হয়নি। বাবার সম্পত্তি ছিল যথেষ্ট—নতুন কিছু গড়ে তুলবো এ ইচ্ছে কোনদিন জাগেনি । তোমার বয়েস হোলে কি হবে, ওই একটা আশাই তোমায়ু যুবক ক’রে রেখে দেবে যে ! আমার মাথায় এত পাকা চুল ছিল না। খোকা মারা যাওয়ার পরে জীবনের উত্তম, আশভরসা যেমন চলে গেল, অমনি মাথার চুলও পেকে উঠলো। তবে এখন ইচ্ছে আছে থোকার নামে একটা স্কুল ক'রে দেবো । আবার তাবি, স্কুলে পড়বেই বা কে ? আমাদের এ অঞ্চলে তো লোকের বাস নেই। তার চেয়ে না হয় একটা ডাক্তারখানা ক’রে দিই। উত্তমই জীবনের সবটুকু, ধার জীবনে আশা নেই, বা কিছু করার ছিল সব হয়ে গেছে—তার