পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 বিভূতি-রচনাবলী সে জানে, তাহার হাতের রান্না ভাল—কিন্তু খরিদ্ধারের মুখে সে কথা শুনিলে তবে না তৃপ্তি। ক্ষুধার্ত ব্রাহ্মণকে খাওয়াইয়াছিল বটে—কিছু সে যাইবার সময় যাহা দিয়া গেল হাজারির মনের আনন্দ ও উৎসাহের দিক দিয়া দেখিতে গেলে তাহা খুব মূল্যবান ও সার্থক প্রতিদান। হাজারি যখন হোটেলে ফিরিল, তখন বেলা বেশী নাই। রতন ঠাকুর ডাল-ভাত চাপাইয়া দিয়াছে, মতি চাকর বা পদ্ম কি কেহই নাই। গদির ঘরে বেচু চকৃত্তি কাহাজের সঙ্গে কথাবার্তা বলিতেছিল। হোটেলের রান্নাঘরে ঢুকিলে কিন্তু হাজারির মনে নতুন বলের সঞ্চার হয়। বরং ছুটি পাইয়া বাহিরে গেলেই যত দুর্ভাবনা আসিয়া জোটে—প্রকাও উমুনের উপরে ফুটন্ত ডেকৃচির সামনে বসিয়া হাজারি নিজেকে বিজয়ী বীরের মত কল্পনা করে। তথন না মনে থাকে কুস্কমের কথা, না মনে থাকে অন্য কোনো কিছু। অবসাদ আসে কাজ হাতে না থাকিলে, এ বরাবর দেখিয়া আসিতেছে সে । ইতিমধ্যে রতন ঠাকুর ফিরিল। হাজারিকে চুপি চুপি বলিল—একটি কথা আছে। আমার দেশের একজন লোক এসেছে —আমার কাছে থেকে চাকরি খুজবে বড় গরীব—তাকে বিনি টিকিটে খাওয়ার ঘরে ঢুকিয়ে খেতে দিতে হবে। তোমার যদি মত হয়, তবে তাকে বলি। হাজারি বলিল—নিয়ে এসো, তার আর কি। গবীর মানুষ খালে, আমার কোনো অমত নেই। রতন ঠাকুর খুব খুশী হইয়া চলিয়া গেল। রাত্রে তাহার লোক যখন খাইতে আসিল, রতন ঠাকুর হাজারিকে ডাকিয় ইঙ্গিতে লোকটাকে চিনাইয়া দিতে, হাজারি পরিতোষ করিয়া তাহাকে খাওয়াইল । পদ্ম ঝিয়ের অত্যস্ত সতর্ক দৃষ্টি এড়াইয়া লোকট। বিনা টিকিটে খাইয়া চলিয়া গেল—কেহ কিছু ধরিতেও পারিল না । এই রকম চলিল, এক-আধ দিন নয়, দশ-বারে দিন । একদিন আবার তাহার অন্য এক সঙ্গী জুটাইয়া আনিয়াছে, তাহাকে বিনামূল্যে খাইতে দিতে হইল। ব্যাপারটি সামান্ত, হাজারি কিন্তু একটা প্রকাও শিক্ষা পাইল ইহা হইতে। এত সতর্ক ব্যবস্থার মধ্যেও চুরি তো বেশ চলে ; বেচু চকত্তির টিকিট ও পয়সাতে ঠিক মিল আছে, স্বতরাং তার দিক দিয়া সন্দেহের কোন কারণ নাই–পদ্ম ঝি যে পদ্ম ঝি, সে পৰ্য্যস্ত বিন্দুবিসর্গ জানিল না ব্যাপারটার। ভাত তরকারি কিছু মাপ থাকে না যে কম পড়িবে। স্বতরাং কে ধরিতেছে । কেন ? এ ধরনের চুরি ধরিবার কি উপায় নাই কোনো ? কয়দিন ধরিয়া হাজারি চুণীর ঘাটে নির্জনে বলিয়া শুধু এই কথা ভাবে। ঠাকুরে ঠাকুরে বড়ম্বৰ করিয়া ৰদি বাহিরের লোক ঢুকাইয়া খাওয়ায়, তবে সে চুরি ধরিবার উপায় কি ? অনেক ভাবিয়া একটা উপায় তাহার মাথায় আসিল একদিন বিকালে । থালায়