পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8wა বিভূতি-রচনাবলী হাজারি সব বোঝে । তাই তো সে আজকাল সৰ্ব্বদা একমনে উপায় চিন্তা করে—কি করিয়া সংসারের উন্নতি করা যায়। চকত্তি মশায়ের হোটেলে রাধুনীবৃত্তি করিলে কখনও যে উন্নতি করা যাইবে না। আর পদ্ম ঝির ঝাটা খাইয়া মাঝে পড়িয়া হাড় কালি হইয়া যাইবে । ভগবান যদি দিন দেন, তবে তাহার আজীবনের সংকল্প সে কার্য্যে পরিণত করিৰে। হোটেল একখানা খুলিবে । কুস্কমের সঙ্গে এই যে আলাপ হইয়াছে, হাজারি এটাকে পরম সৌভাগ্য বলিয়া মনে করে । কুষম চমৎকার মেয়ে—প্রবাস-জীবনে কুস্কমের সাহচৰ্য্য, তাহার মধুর ব্যবহার—হোকু না সে গোয়ালার মেয়ে–কিন্তু বড় ভাল লাগে, আরও ভাল লাগে এইজন্তে যে ঠিক কুমুমের মত স্নেহপ্রবণ কোনো আত্মীয়া মেয়ের সংস্পর্শে সে কখনও আসে নাই। অনেকখানি যে নির্ভর করা যায় কুস্কমের ওপর । সব বিষয়ে নির্ভর করা যায়। মনে হয়, এ কাজের ভার কুস্কমের উপর দিয়া নিশ্চিন্ত হওয়া যায়, সে প্রতারণা করিবে তো নাই-ই, বরং প্রাণপণ-যত্বে কাজ উদ্ধার করিবার চেষ্টা করিবে, যেমন আপনার লোকে করিয়া থাকে। হাজারি যদি নিজের দিন ফিরাইতে পারে, তবে কুস্কমের দিনও সে আমন রাখিবে না । টেপিও তার মেয়ে, কিন্তু টেপি বালিকা, কুষম বুদ্ধিমতী । ৪ ধেন তার বড় মেয়ে—যে বাপের দুঃখকষ্ট সব বোঝে এবং বুঝিয়া তাহা দূর করিবার চেষ্টা করে। মন-প্রাণ দিয়া চেষ্ট করে। মেয়েও বটে, বন্ধুও বটে। সকালে সেদিন রতন ঠাকুর আসিল না। পদ্ম ঝি আসিয়া বলিল, ও-ঠাকুর আজ আর আসবে না, কাল বলে গিয়েচে ; তরকারীগুলো তুমি কুটে নাও, নিয়ে রান্ন চাপিয়ে দাও, আমি আঁচ দিয়ে দিচ্চি। হাজারি প্রমাদ গণিল। আজ হাটবার, দুপুরে অন্ততঃ একশো দেড়শো হাটুরে খরিদ্ধার খাইবে ; একহাতে তাহাদের রান্না করা এবং খাওয়ানো সোজা কথা নয়। পদ্ম বিয়ের কথামত সে বঁটি পাতিয়া তরকারি কুটিতে বসিয়া গেল—বেলা সাড়ে-আটটার সময় সবে ডাল-ভাত নামিয়াছে—এমন সময় একজন খরিদার টিকিট লইয়া থাইতে আসিল । হাজারি বলিল—আঞ্জে বাবু, সবে ডাল-ভাত নেমেছে, কি দিয়ে খাবেন ? লোকটি রাগিয়া বলিল—ন’টা বেজেচে, মোটে ডাল-ভাত ? কি রকম ঠাকুর তুমি ? বন্ধু বাড়য্যের হোটেলে এতক্ষণ তিনটে তরকারি হয়ে গিয়েচে । এ রকম করলেই তোমাদের হোটেল চলেচে ? * হাজারি বলিল—নটা তো বাজেনি বাবু, সাড়ে-আটট। লোকটার মেজাজ রুক্ষ ধরনের। বলিল—আমি বলচি ন’টা, তুমি বলচে সাড়ে-আটটা! আবার মুখে মুখে তর্ক ? আমি ঘড়ি দেখতে জানিনে ? —সে কথা তো হয় নি বাৰু। ঘড়ি কেন দেখতে জানবেন না, আপনার বড় লোক । কিন্তু ন’টা বাজলে কেষ্টনগরের গাড়ী আসে। সে গাড়ী তো এখনো আসে নি ?