পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দুহোটেল &S চুকেচে, তাই বলে দেখে আসি যদি– হাজারি বলিল—ই্যা হ্যা পাঠিয়ে দ্যাও গিয়ে, ভাত যা আছে খুব হয়ে যাবে। বংশীধরের ভাগিনেয় আসিল । চমৎকার চেহারা, আঠারো-উনিশের বেশী বয়স নয়। তাহাকে আসন করিয়া ভাত দিতে গিয়া হাজারি দেখিল ডেকৃচিতে যা ভাত আছে, তাহাতে দু-জনের কুলায় না। বংশীধরের ভাগিনেয়টি পল্লীগ্রামের স্বাস্থ্যবান ছেলে, নিশ্চয়ই ছুটি বেশী ভাত খায়—তাহারই পেট ভরিবে কিনা সন্দেহ । হাজারি উহাকেই সব ভাতগুলি বাড়িয়া দিল—ডাল তরকারি যাহা ছিল তাহাও দিল, সে থাইতে খাইতে বলিল—মাছ নেই ? —লা বাবা, মাছ সব ফুরিয়ে গিয়েচে । আজ এখানকার হাটবার, বডড খন্দেরের ভিড় । মাছের টান, ডাল তরকারির টান, সবেরই টান । তোমার খাওয়ার বডড কষ্ট হোল বাবা, তা বোসে দু-পয়সার দুই আনিয়ে দিই। —না না থাকৃ, আপনার দুই আনাতে হবে না। —না বাবা বসো ! বংশীধরের ভায়ে যা, আমার ভাগ্নেও তাই। পাশাপাশি হোটেল— এতদিন কাজ করচি । হাজারি নিজে গিয়া দই আনিয়া দিল । ছেলেটি জিজ্ঞাসা করিল—আচ্ছ মামা, এখানে কোন চাকৃরি খালি আছে ? —কি চাকৃরি বাবা ? –এই ধরুন হোটেলের র ধুনীগিরি কি এমনি । কাজের চেষ্টায় ঘুরুচি। এখানে কিছু হবে মামা ? মামা বলিয়া ডাকিতে ছেলেটির উপর হাজারির কেমন স্নেহ হইল। সে একটু ভাবিয়া বলিল—না বাবা, আমার সন্ধানে তো নেই, কিন্তু একটা কথা বলি। হোটেলের রাধুনীগিরি করতে যাবে কেন তুমি ? দিব্যি সোনার চাদ ছেলে। এ লাইনে বড় কষ্ট, এ তোমাদের লাইন নয়। পড়াশুনা কদর করেচ ? ছেলেটি অপ্রতিভের স্বরে বলিল—ন মাম, বেশী কfর নি । আমাদের গায়ের ছাত্রবৃত্তি ইস্কুলের ফোর্থ ক্লাস পর্য্যস্ত পড়েছিলাম, তারপর বাবা মারা গেলেন, আর লেখাপড়া হোল না। —তোমার নামটি কি ? —শ্ৰীনরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। হঠাৎ একটা চিন্তা বিদ্যুতের মত হাজারির মনের মধ্যে খেলিয়া গেল, চমৎকার ছেলেটি, ইহার সঙ্গে টেপির বিবাহ দিলে বড় সুন্দর মানায় !••• কিন্তু তাহ! কি ঘটিবে ? ভগবান কি এমন পাত্র টেপির ভাগ্যে জুটাইয় দিবেন। ছেলেটি খাওয়া শেষ করিয়া উঠিয়া বলিল--আপনার খাওয়া হয়েচে মামা ? —এইবার খেতে বসবে৷ বাবা। আমাদের খাওয়া এইরকম । বেলা তিনটের এদিকে বড় একটা মেটে না, সেইজন্যই তো বলচি বাবা এসব ছ্যাচড়া লাইন, তোমাদের জন্তে নয়