পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দুহোটেল ○〉 কোনো সদ্ভুক্তর পাওয়া গেল না—তাহার সেই এক কথা, ঘরের মধ্যে অঘোরে ঘুমাইতেছিল, সে কিছুই জানে না। বড় দারোগ বলিলেন—দু-জনকেই হাজতে পুরে রেখে দাও—এম্নি এদের কাছে কথা বেরুবে না—কড়া না হোলে চলবে না এদের কাছে । হাজারি জানে এই কড়া হওয়ার অর্থ কি। অনেক দুঃখ হয়তো সহ করিতে হইবে আজ । সব সহ করিতে সে প্রস্তুত আছে যদি কুসুমের নাম ইহারা আর না তোলে। বেলা দুইটার সময় একজন কনস্টেবল আসিয়া কিছু মুড়ি ও ছোলা-ভাজা দিয়া গেল। সকাল হইতে হাজারি কিছুই খায় নাই—সেগুলি সে গোগ্রাসে খাইয়া ফেলিল । বেলা চারটার সময় রতন ঠাকুর হোটেল হইতে হাজারির জন্য ভাত আনিল । বলিল—আলাদা করে বেড়ে রেখেছিলাম, লুকিয়ে নিয়ে এলাম হাজারি-দ।। কেউ জানে ন যে তোমার জন্তে ভাত আনচি । বড় দরোগার নিকট হইতে অনুমতি লইয়া রতন ঠাকুর হাজতের মধ্যে ভাত লইয়। আসিয়াছিল । কিন্তু মতির ভাত আনিবার কথা তাহার মনে ছিল না—হাজারি বলিল—ওই ভাত দু-জনে ভাগ করে খাবো এখন । রতন বলিল—হোটেলে মহাকাও বেধে গিয়েচে । একটা ঠিকে ঠাকুর আনা হয়েছিল, সে কাজের বহর দেখে এবেলাই পালিয়েচে। খদের অনেক ফিরে গিয়েচে । পদ্ম বলচে তুমি আর মতি দুজনে মিলে এ চুরি করেচ। কুমুমের বাড়ী খানাতল্লাস না করিয়ে পদ্ম ছাড়বে না বলচে । সেখানে বাসন চুরি করে তুমি রেখে এসেচ । কৰ্ত্তারও তাই মত। তুমি ভেবে না হাজারি-দা—মোকদ্দমা বাধে যদি আমি উকিল দেবো তোমার হয়ে। টাকা যা লাগে আমি দেবো। তুমি এ কাজ করনি আমি তা জানি। আর কেউ না জামুক, আমি জানি তুমি কি ধরণের লোক । হাজারি রতনের হাত ধরিয়া বলিল –ভাই আর যা হয় হোকৃ—কুমুমের বাড়ী যেন খানতল্লাস না হয় এটা তোমাকে করতে হবে। কোনো উকীলের সঙ্গে না হয় কথা বলে, আমার দ্বমাসের মাইনে পাওনা আছে—আমি না হয় তোমাকে দেবো। . রতন হাসিয়া বলিল—তোমাস সেই মাইনে আবfর দেবে ভেবেচ কর্তীবাবু ? তা নয়— সে তুমি দ্যাও আর নাই দ্যাও—আমি উকীল দেবো তুমি ভেবে না। কত পয়সা রোজগার করলাম জীবনে হাজারি-দা—এক পয়সা তো দাড়াল না । সংকাজে ছপয়সা খরচ হোক । 曼 হাজারি বলিল—মতিকে তাহোলে ভাত দিয়ে এস—পে অন্ত ঘরে কোথায় আছে । রতন বলিল—মতিকে আমার সন্দেহ হয় । —ন বোধ হয়। ও যদি চুরি করবে তো অমন নিশ্চিন্দি হয়ে ঘুমোতে পারে নাক ডাকিয়ে ? আfর ও সেরকম লোক নয় । রতন ভাতের থালা লইয়া চলিয়া গেল ।