পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bペ বিভূতি-রচনাবলী বুঝিল এ বাজে কথা বলিতেছে না। বলিল—আচ্ছ আপনি আমাদের বাড়ী যান। এই সামনের রাস্তা দিয়ে বরাবর গিয়ে বঁ-দিকে দেখবেন বড় বাড়ী—ওরে নিতাই, তুই বাপু একবার যা তে, ঠাকুর মশায়কে বাড়ীতে শশধরের হাতে তুলে দিয়ে আয়। বলগে, ইনি আজ থেকে রাধবেন । বুঝলি ? নিয়ে যা-মাইনে-টাইনে কিন্তু, ঠাকুর মশায়, পরে কাজ দেখে ধাৰ্য্য হবে। হ্যা—সে দু-চারদিন পরে তবে-নিয়ে যা । 戲 প্রথম দিনের কাজেই হাজারি নাম কিনিয়া ফেলিল । বাড়ীর কর্তী দশ টাকা বেতন ধাৰ্য্য করিয়া দিলেন। তাহার গৃহিণী অনুস্থ প্রায় বারোমাস, উঠিতে বসিতে পারলেও সংসারের কাজকৰ্ম্ম বড় একটা দেখেন না—দুটি মেয়ের বিবাহ হইয়া গিয়াছে, তাহারা থাকে শ্বশুরবাড়ী একটি ষোল-সতেরা বছরের ছেলে স্কুলে পড়ে, আর একটি আট বছরের ছোট মেয়ে। বাড়ীর সকলেই ভাল লোক-এতদিন চাকুরি করিয়া হাজারির যে খারাপ ধারণা হইয়াছিল পরের চাকুরি সম্বন্ধে, এখানে আসিয়া তাহা চলিয়া গেল । ইহারা জাতিতে গন্ধবণিক, বাড়ীর সকলেই ব্রাহ্মণকে খাতির করিয়া চলে—হাজারির মৃদু স্বভাবের জন্তও সে অল্পদিনের মধ্যে বাড়ীর সকলের বিশেষ প্রিয়পাত্র হইয়া উঠিল। মাসখানেক কাজ করিবার পর হাজারি প্রথম মাসের বেতন পাইয়াই বাড়ী যাইবার ছুটি চাহিল । অনেকদিন বাড়ী যাওয়া হয় নাই—টে পিকে কত কাল দেখে নাই। দোকানের মালিক ছুটিও দিলেন । গোপালনগর স্টেশনে ট্রেনে চড়িয়া বাড়ী আসিতে প্রায় তিন আনা ট্রেন ভাড়া লাগে । মিছামিছি তিন আনা পয়সা খরচ করিয়া লাভ নাই । ইটোপথে মাত্র সাত-আট ক্রোশ হাজারিদের গ্রাম—হঁাটিয়া যাওয়াই ভাল । বাড়ী পৌছিতে সন্ধ্যা হইয়া গেল। টেপি ছুটিয়া আসিয়া বলিল—বাবা, এসো, এসো। কোথেকে এলে এখন ? তারপর সে ঘরের ভিতর হইতে পাখা আনিয়া বাতাস করিতে বসিয়া গেল। হাজারির মনে হইল তার সারা দেহ-মন জুড়াইয় গেল টেপির হাতের পখিার বাতাসে। টেপির জন্য খাটিয়া স্বখ—স্বত কষ্ট যত দুঃখ রানাঘাট হোটেলের—সব সে সহ করিয়াছে টেপির জন্ত । ভবিস্তুতে আরও করিবে । যদি বংশীধর ঠাকুরের তাগিনেয় সেই ছেলেটির সঙ্গে - স্বাক সে সব কথা । টেপি বলিল—-বাবা, অতসৗদিদি একদিন তোমার কথা বলছিল— —আমার কথা ? হরিচরণবাবুর মেয়ে ? —হঁ্যা বাবা, বলছিল তুমি অনেকদিন আলো নি। চল না আজ, বাবে । ওখানে গিয়ে চা খাৰে এখন । কলের গান শুনবে ।