পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দুহোটেল \yማ হাজারি বলিল—কিন্তু তুমি একথা শুনলে কোথায় বলতে হবে মা। অতসী হাসিয়া বলিল—সে কথা বলবো না বলেছি তো । — তা হোলে টাকাও নেবো না। আগে বলে কে বলেছে ? —আচ্ছা, নাম করলে তাকে কিছু বলবেন না বলুন— —কাকে কি বলবো বুঝতে পারছি নে তো ? বলাবলির কথা কি আছে এর মধ্যে ? আচ্ছ, বলবো না। বলো তুমি । —টেপি বলেছিল, বাবার ইচ্ছে একটা হোটেল খোলেন, আমার বাবার কাছে নাকি টাকা চেয়েছিলেন ধার -ত বাবা দিতে পারেন নি। দেখুন কাকাবাবু, দাদা মারা যাওয়ার পরে বাবার মন খুব খারাপ। ওঁকে বলা না বলা দুই সমান। আমি ভাবলাম আমার হাতে তে টাকা আছে—কাকাবাবুকে দিই গে---ওঁদের উপকার হবে । আমার কাছে তো এমনি পড়েই আছে। আপনার হোটেল নিশ্চয়ই খুব ভাল চলবে, আপনারা বড়লোক হয়ে যাবেন। টেপিকে আমি বড় ভালবাসি, ওর মনে যদি আহলাদ হয় আমার তাতে তৃপ্তি। টাকা বাক্সে তুলে রেখে কি হবে ? —ম, তোমার টাকা তোমার বাবাকে না জানিয়ে আমি নিতে পারি নে। অতসী যেন বড় জমিয়া গেল। হাজারির সঙ্গে সে অনেকক্ষণ ছেলেমামুৰী তর্ক করিল, বাবাকে না জানাইয়া টাকা লইলে দোষ কি ! শেষে বলিল—আমি টেপিকে এ টাকা দিচ্ছি। —ত তুমি দিতে পারো না। তুমি ছেলেমানুষ, টাকা দেওয়ার অধিকার তোমার নেই ম। তুমি তো লেখাপড়া জানো, ভেবে দেখ । —আচ্ছা, আমায় লাভের অংশ দেবেন তা হোলে ? হাজারির হাসি পাইল। কুস্কম, গোয়ালা-বাড়ীর সেই বউট, অতসী—সবাই এক কথা বলে । ইহারা সকলেই মহাজন হইয়া টাকা ব্যবসায়ে থাটাইতে চায়। মজার ব্যাপার বটে ! —ন মা, সে হয় না। তুমি বড় হও, শ্বশুরবাড়ী যাও, আশীৰ্ব্বাদ করি রাজরাণী হও, তখন তোমার এই বুড়ো কাকাবাবুকে যা খুশি দিও, এখন না । অতসী দুঃখিত হইয়া চলিয়া গেল । হাজারির ইচ্ছা হইল টেপিকে ডাকিয়া বকিয়া দেয়। এসব কথা অতসীর কাছে বলিবার তাহার কোনো দরকার ছিল না, কিন্তু অতসীর নিকট প্রতিজ্ঞা-বদ্ধ আছে, টেপিকে ইহা লইয়া কিছু বলিলেই অতসীর কানে গিয়া পৌছাইবে ভাবিয়া চুপ করিয়া গেল। সেদিন বিকালে গোয়ালাপাড়ায় বেড়াইতে গিয়া কুস্কমের বাপের বাড়ীতে শুনিল রাণাঘাটে কুস্কমের অত্যন্ত অস্থখ হইয়াছিল, কোনোরূপে এধাত্রা সামলাইয়া গিয়াছে। সে কিছুই জিজ্ঞাসা করে নাই, কথায় কথায় কুম্বমের কাকা ঘনহাম ঘোষ বলিল—মধ্যে রানাঘাটে পনেরো দিন ছেলাম দাদাঠাকুর, ছানার কাজ এ মাসটা বডড মন্দা ।