পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS२ বিভূতি-রচনাবলী একদিনে শিখিয়ে দেবে জেঠিমাকে । রাখাল কয়লা নামাইয়া বলিল—বাবু, আর কি করতে হবে এখন ? হাজারি বলিল-তুই এখন স্বাসনে—জলটলগুলো তুলে দিয়ে জিনিসপত্তর গুছিয়ে রেখে তবে ধাবি । হোটেলের বাজার এসেছে ? —এসেছে বাবু । —তা থেকে এবেলার মত মাছ-তরকারি চার-পাচ জনের মত নিয়ে আয় । ওবেলা আলাদা বাজার করলেই হবে। আগে জল তুলে দে দিকি । টেপির মা বলিল—ও কে গো ? —ও আমাদের হোটেলের চাকর । বাসার কাজও ও করবে, বলে দিইছি । টে পির মা অবাক হইল। তাহাদের নিজেদের চাকর, সে আবার হাজারিকে ‘বাৰু? সম্বোধন করিতেছে—এ সব ব্যাপার এতই অভিনব ষে বিশ্বাস করা শক্ত। গ্রামের মধ্যে তাহারা ছিল অতি গরীব গৃহস্থ, বিবাহ হইয়া পৰ্য্যস্ত বাসন-মাজা, জল-তোলা, ক্ষার-কাচা, এমন কি ধান ভান পৰ্য্যস্ত সৰ্ব্বরকম গৃহকৰ্ম্ম সে একা করিয়া আসিয়াছে। মাস চার পাচ হইল দুটি সচ্ছল অল্পের মুখ সে দেখিয়া আসিতেছে, নতুবা আগে আগে পেট ভরিয়া দুটি ভাত খাইতে পাওয়াও সব সময় ঘটিত না । আর আজ এ কি ঐশ্বর্ঘ্যের দ্বার হঠাৎ তাহার সম্মুখে উন্মুক্ত হইয়া গেল! কোঠাবাড়ী, চাকর, বলের জল—এ সব স্বপ্ন না পত্য ? রাখাল আসিয়া বলিল—দেখুন তো মা এই মাছ-তরকারিতে হবে না আর কিছু আনবো ? বড় বড় পোনা মাছের দাগ দশ-বারে খানা । টেপির মা খুশির সহিত বলিল—না বাবা আর আনতে হবে না। রাখে ওখানে । —ওগুলো কুটে দিই মা ? মাছ কুটিয়াও দিতে চায় যে ! এ সৌভাগ্যও তাহার অদৃষ্টে ছিল। হাজারি বলিল—আগে জল তুলে দে তারপর কুটুবি এখন। আগে সব নেয়ে নিই। কুস্বম কয়লার উকুনে আঁচ দিয়া আসিয়া বলিল—জেঠিম! আপনিও নেয়ে নিন। ততক্ষণ আঁচ ধরে স্বাক্ । বেলা প্রায় এগারোটা বাজে । রান্না চড়িয়ে দেবার আর দেরি করবার দরকার কি ? আমি এবার ধাই। টেপির মা বলিল—তুমি এখানে এবেলা খাবে কুস্কম। কুসুম ব্যস্তভাবে বলিল—ন না, আপনারা এলেন তেতেপুড়ে এই দুপুরের সময় । এখন কোনোরকমে দুটো ঝোলভাত রোধে আপনারা এবেলা খেয়ে নিন—তার মধ্যে আবার আমার খাওয়ার হাংনামায়— —কিছু হাংনামা হবে না মা । তুমি না খেয়ে যেতে পারবে না। ভাল বেগুন এনেছি গা থেকে, তোমাদের শহরে তেমন বেগুন মিলবে না-বেগুন পোড়াবে এখন। বাপের বাড়ীর বেগুন খেয়ে যাও আজ। কাল শুটুকে স্বাবে ।