পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দু-হোটেল Ye O —আমি তো বলেছি, না দিতে পারেন তাই কি ?••••••আপনি বহন, আমি টাকা নিয়ে আসি— আধঘণ্টার মধ্যে অতসী ফিরিল । সস্তপণে আঁচলের গেরো খুলিয়া তাহাকে দুইশত টাকার খুচরা নোট গুনিয়া দিতে দিতে বলিল—এই রইল। আমার টাকা ফেরত দিতে হবে না। টেপির বিয়ে দেবেন সে টাকায় । আমি যাই, লুকিয়ে চলে এসেছি, বাবা খুজবেন আবার । রাণাঘাট যাইতে সারাপথ হাজাধি অন্যমনস্কভাবে চলিল .. বেশ মেয়ে অতসী, ভগবান ওর ভাল করুন । তাহার মন বলিতেছে ওর হাত দিয়া ষে টাকা আসিয়াছে—সে টাকায় ব্যবসা খুলিলে লোকসান ধাইবে না। স্বয়ং লক্ষ্মী যেন তাহার হাতে আসিয়া টাকা গুজিয়া দিয়া গেলেন । --- হোটেলে পৌঁছিয়া সে দেখিল রান্নাঘরে বংশী ঠাকুর ডাল চাপাইয়া এক বসিয়া । তাহাকে দেখিয়া বলিল—আরে এসো হাজারি-দ, বডড বেলা করলে যে ! বড় ডেকে ভাতটা চাপাও— নেবে নাকি একটু দম দিয়ে ? —তা নাও না ? সাজো গিয়ে—আমি ডাল দেখছি— একটু পরে গজার কলিকাটি হাজারির হাতে দিয়া বংশী বলিল—একটা বড় কাজের বায়ন এলেচে, নেলে ? আব্দুলের ঘোষেদের বাডী রাস হবে-সাতদিনের ঠিকে কাজ। বঁদে ভিয়েন, সন্দেশ ভিয়েন, রান্না এই সব । দু’টাক মজুর দিন—খোরাকি বাদে । হাজারি দলিল-বংশী একটা কথা ব ল তোমায় । আমি হোটেল খুলছি রাণাঘাটের বাজারে । কাউকে বোলো না কথাটা । তোমাকে আসতে হবে আমার হোটেলে । কথাটা ঠিক শুনিয়াছে বলিয়া বংশীর যেন মনে হইল না । সে অবাকৃ হইয়া উহার দিকে চাহিয়া থাকিয়া বলিল—হোটেল খুলবে ? তুমি । —ই, আমি না কে ? শেমার বেহাই ? বংশী বলিল—কি পাগলের মত বলছ হাঙ্গরি-দা ? কলকে রাখে, আর টান দিও না। রেলবাজারে একটা হোটেল খুলতে কত টাকা লাগে তুমি জানো ? — কত টাকা বলে তোমার মনে হয় ? ~–পাচশো টাকার কম নয় । —চারশোতে হয় না ? —আপাততঃ চলবে—কিন্তু কে তোমায় চারশো টাকা— উত্তরে ক্টোচার কাপড়ের গেরো খুলিয়া হাজারি বংশীকে নোটের তাড়া দেখাইয়া বলিল— এই দেখছো তো দুশো টাকা এতে আছে। যোগাড় করে এনেছি। এখন লাগো গাছকোমর বেঁধে—তোমার অংশ থাকবে যদি প্রাণপণে চালাতে পারে—তোমায় ফাকি দেবো না । আজি থেকেই বাড়ী দেখ—পনেরো টাকা পৰ্য্যন্ত ভাড় দেলো—আর দুশো টাকাও যোগাড় আছে । বংশী ঠাকুর মুখের মধ্যে একটা অস্পষ্ট শব্দ করিয়া বলিল—ভালা আমার মানিক রে ।