পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Mbro বিভূতি-রচনাবলী বলছিলেন বাবাকে । বলিয়া মানী হাসিল । 鹹 বিপিন বলিল, যদি খরচই ক’রে থাকি, সে তো তোদেরই জন্তে । তুই এসেছিস এতকাল পরে, একটু ভাল মাছ না খেতে পেলে তুইই বা কি ভাববি ? মানী মুখ টিপিয়া হাসিয়া বলিল, মহাল থেকে মাছ আনলে না কেন ? —কে মাছ দেবে বিনি পয়সায় তোদের মহালে ? বাবার আমলের সে ব্যাপার আর আছে নাকি ? এখন লোক হয়ে গিয়েছে চালাক, তাদের চোখ কান ফুটেছে । তোর মা কি সে খবর রাখেন ? —তা নয়, বিনোদকাকার মত ডানপিটে চুদেও তো তুমি নও বিপিনদ্ধা । তুমি ভালমাল্লুব ধরনের লোক, জমিদারির কাজ করা তোমার দ্বারা হবে না । শেষ কথাগুলি মানী যথেষ্ট গাম্ভীর্থের সঙ্গে বলিল । বিপিন হাসিয়া উঠিয়া বলিল, তাই তো রে মানী, একেই না বলে জমিদারের মেয়ে ! দপ্তরমত জমিদার চালের কথাবার্তা হচ্ছে ধে । মানী বলিল, কেন হবে না, বল ? আমি জমিদারের মেয়ে তো বটেই, সংস্কৃত তো পড় নি বিপিনদা, সংস্কৃতে একটা শ্লোক আছে—সিংহের বাচ্চ জন্মেই হাতীর মুণ্ডু খায় আর— —থাক্ থাকৃ, তোর আর সংস্কৃত বিষ্ঠে দেখাতে হবে না, ও সবের ধার মাড়াই নি কখনও । আচ্ছা, আলি মানী, রাত হয়ে যাচ্ছে । মানী বলিল, শোন শোন, যেও না, রাত এখন তো ভারী । আচ্ছ বিপিনদ, ভারী দুঃখ হয় আমার, লেখাপড়াটা কেন ভাল ক’রে শিখলে না ? তোমার চেহারা ভাল, লেখাপড়া শিখলে চাকরিতে তোমায় যেচে আদর করে নিত—এ আমি বলতে পারি। বিপিন বলিল, আচ্ছা মানী, একবার তুই আর আমি ভাড়ারঘর থেকে ফুলচুর চুরি করে খেয়েছিলাম, মনে পড়ে । সিড়ির ঘরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে খেয়েছিলুম ? মানী বলিল, তা আর মনে নেই! সে সব একদিন গিয়েছে! কিন্তু আমার কথা ওভাবে চাপা দিলে চলবে না । লেখাপড়া শিখলে না কেন, বল ? বিপিন হাসিয়া বলিল, উঃ, কি আমার কৈফিয়ৎ তলবকারিণী রে । পরে ঈষৎ গম্ভীর মুখে বলিল, সে অনেক কথা । সে কথা তোর শুনে দরকারও নেই। তবে তোর কাছে মিথ্যে কথা বলব না । হ’ল কি জানিস ? বাবা মারা গেলেন বিস্তর বিষয়সম্পত্তি ও কাচা টাকা রেখে । আমি তখন সবে কুড়ি বছরে পা দিয়েছি, মাথার ওপর কেউ নেই। টাকা উডুতে আরম্ভ ক’রে দিলাম, পড়াশুনো ছাড়লাম, বিষয়সম্পত্তি নগদ টাকা পেয়ে কম স্বরে মৌরসী বিলি করতে লাগলাম। বদখেয়ালের পরামর্শ দেবারও লোক জুটে গেল অনেক । কতদূর যে নেমে গেলাম— মানী একমনে শুনিতেছিল, শিহরিয়া উঠিয়া বলিল, বল কি বিপিনা ! —তোর কাছে বলতে আমার কোনও সঙ্কোচ নেই, সঙ্কোচ হ'লেও কোনও কথা লুকোব না। আজ এত দুঃখু পাব কেন মানী, এখানে চাকরি করতে আগব কেন ?