পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী 8"לצ —এই যে মানী, কদিন দেখি নি ? —তুমি কখন যাও, কখন খাও, তোমার নিজেরই হিসেব আছে ? আজ পোলাও কেমন খেলে ? --বেশ । —না, সত্যি বল না ? ভাল হয়েছিল ? —কেন বল তো ? —আগে বল না, কেমন হয়েছিল ? —বললুম তো, বেশ হয়েছিল । —আমি রোধেছি। তুমি মিষ্টি পোলাও খেতে ভালবাসতে, মনে আছে ? —খুব মনে আছে । আচ্ছা, আমি খাই মানী, রাত হয়ে গেল খুব। মানী একটু ইতস্তত কবিয়া বলিল, মা তোমাকে পেট ভরে খেতে দিয়েছিল তো পোলাও ? আমি ওখানে যেতাম, কিন্তু— বিপিন বুঝিতে পারিল, মানীর স্বামীও সেখানে, এ অবস্থায় মায়ের সামনে পল্লীগ্রামের রীতি অনুসারে মানীর যাওয়াটা অশোভন । —স্থ্য, সে সব ঠিক হয়েছিল। আমি ধাই। মানী বুদ্ধিমতী মেয়ে। মায়ের হাত সে খুব ভাল রকমই জানে, জানে বলিয়াই সে এ প্রশ্ন বিপিনকে করিল। কিন্তু বিপিনের উণ্ড উড ভাব দেখিয়া সে একটু বিস্মিত না হইয়া পারিল না। বিপিনদী তো কখনও তাহার সঙ্গে কথা বলিবার সময় এমন যাই যাই করে না! হয়তো ঘুম পাইয়াছে, রাত কম হয় নাই বটে। ইহার পর দুই দিন সে জমিদারবাৰুর হুকুমে জেলেদের খাজনার তাগাদ করিতে ঘোষপুর গিয়া রহিল । ওখানকার মাতব্বর প্রজা রাইচরণ ঘোষের চণ্ডীমণ্ডপে ইহার পূৰ্ব্বেও সে কিস্তির সময় কয়েকদিন ছিল । নিজেই রাধিয়া খাইতে হয়, তবে আদর-যত্ন যথেষ্ট। সঙ্গতিপন্ন গোয়ালাবাড়ী, দুধ-দই-ঘিয়ের অভাব নাই । জমিদারের ব্রাহ্মণ নায়েব বাড়ীতে অতিথি । বাড়ীর সকলে হাতজোড়, তটস্থ। কিন্তু বিপিন মনে মনে ভাবে, এতে কি জমিদারের মান থাকে ? এমন হয়েছেন আমাদের জমিদার, যে একখানা কাছারি-ঘর করবেন না । অথচ এই মহলে সালিয়ান আড়াই হাজার টাকা আদায়। একখানা দো-চালা ঘর তুলে রাখলেও তো হয় ; কিন্তু তাতে যে পয়সা খরচ হয়ে যাবে ] ওরে বাবা রে ! তিন দিনের দিন রাত্রে বিপিন জমিদার-বাড়ী ফিরিল। যাহা আদায়-পত্র হুইয়াছে জনাদিবাবুকে তাহার হিসাব বুঝাইয়া দিয়া একটু বেশি রাত্রে বাড়ীর ভিতর হইতে খাইয়া ফিরিতেছে, জানালায় দাড়াইয়া মানী ডাকিল, বিপিনদ্ধা ! —এই ষে মানী, কেমন ? তোর নাকি মাথা ধরেছিল শুনলুম, মাদীমার মুখে ? মানী সে কথার কোনও উত্তর দিল না। বলিল, দাড়াও, একটা কথা বলি ।