পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার ასrჯ» দেওয়ার স্বখ সে তালই বোঝে, যদিও পয়সার অভাবে আজ অনেক দিন হুইল সে সব বন্ধ আছে, তবুও গল্পগুজব করিতেও তো মন চায়, তাহাতে তো পয়সা লাগে না । বাড়ীতে থাকিতে বাড়ীতেই দুই বেলা কত লোক আৰ্মিত, গল্প করিত। এই দুরবস্থার উপরও বিপিন তাহাদিগকে চা খাওয়ায়, তামাক খাওয়ায়, বন্ধুবান্ধবদের পান খাওয়ানোর জন্য প্রতি হাটে তাহার এক গোছ পান লাগে ! অত পান সাজিতে হয় বলিয়া মনোরমা কত বিরক্তি প্রকাশ করে ; কিন্তু বিপিন মাহুষ-জনের যাতায়াত বড় ভালবাসে, তাহদের আদর-আপ্যায়ন করিতে ভালবাসে । দুরবস্থায় পড়িলেও তাহার নজর ছোট হয় নাই, জমিদারবাবু ও তাহার গৃহিণীর মত। ধোপাখালি গ্রামে ভদ্রলোকের বাস নাই, যত মুচি, গোয়ালা, জেলে প্রভৃতি লইয়া কারবার। তাহীদের সঙ্গে যতক্ষণ কাজ থাকে, ততক্ষণই ভাল লাগে । কাজ ফুরাইয়া গেলে তাহাদের সঙ্গ বিপিনের আর এতটুকুও সহ হয় না। অথচ একা থাকাও তাহার অভ্যাস নাই । নির্জন কাছারি-ঘরে সন্ধ্যাবেলা একা বসিয়া থাকিতে মন হাপাইয়া উঠে । এমন একটা লোক নাই, যাহার সঙ্গে একটু গল্প-গুজব করা যায় । আজকাল এই সময়ে মানীর কথাই বেশি করির মনে পড়ে । কাছারির চাকর ছোক ফিরিয়া আসে, কোন কোন দিন তাহার সঙ্গে সামান্য একটু গল্প-গুজব হয়। তারপর সে রামার যোগাড় করিয়া দেয়, বিপিন রাধিতে বসে। কাছারির বাদাম গাছটার পাতায় বাতাস লাগিয়া কেমন একটা শব্ব হয়, ঝোপে-ঝাড়ে জোনাকি জলে, জেলে-পাড়ার গদাধর পাড়ুইয়ের বাড়ীতে রোজ রাত্রে পাড়ার লোক জুটিয়া হরিনাম করে, তাহদের খোল-করতালের আওয়াজ পাওয়া যায়, ততক্ষণ স্বামীবাড়া সারিয়া বিপিন খাইতে বসে । 6. এক একদিন এই সময় হঠাৎ কামিনী আসিয়া উপস্থিত হয় । হাতে একবাটি ট্ধ । রান্নাঘরে উকি মারিয়া বলে, খেতে বসলে নাকি বাবা ? —এস মাসী, এস। এই সবে বসলাম খেতে । –এই একটু দ্বধ আনলাম। ওরে শতু, বাবুকে বাটিটা এগিয়ে দে দিকি। আমি আর রান্নাঘরের ভেতর যাব না । —না, কেন আসবে না মাসী ? এস তুমি। ব’স এখানে, খেতে খেতে গল্প করি । কামিনী কিন্তু দরজার চৌকাঠ পার হইয়া আর বেশি দূর এগোয় না। সেখান হইতে গলা বাড়াইয়া বিপিনের ভাতের থালার দিকে চাহিয়া দেখিবাব চেষ্টা করিয়া বলে, কি রাধলে আজ এবেলা ? —আলু ভাতে, আর ওবেলার মাছ ছিল । 鰻