পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ বাষ্ঠীতে আসিয়া প্রথম দিন পাচ-ছয় বলাই বেশ ভাল ছিল । বিপিন চাকুরিস্থলে চলিয়া গেলে সে একদিন গ্রামের নবীন রায় মহাশয়ের বাড়ীতে বসিয়া আছে—নবীন রায়ের ছেলে বিষ্ণু বলিল, বলাইছা, মাংসের ভাগ নেবে ? আমরা উত্তরপাড়া থেকে ভাল খাসি আনিয়েছি, এবেল কাটা হবে । সাত আন ক’রে সের পড়তা হচ্ছে । বলাই অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার ফলেই অমুখ বাধাইয়াছিল। মাংস খাওয়া তাহার বারণ আছে, এবং দাদা বাড়ী থাকার জন্তই সে বিশেষ কিছু বলিতেও সাহস করে নাই। কিন্তু এখন আর সে ভয় নাই । মনোরম বারণ করিয়াছিল । বলাই বৌদিদিকে তত আমল দেয় না, ফলে তাহার মাংস খাওয়া কেহ বন্ধ করিতে পারিল না । দুই তিন দিনের মধ্যে বলাই আবার অনুস্থ হইয়া পড়িল । বিপিন অস্বখের খবর পাইয়াও বাড়ী আসিতে পারিল না, জমিদার অনাদিবাবু কিস্তির সময় ছুটি দিতে চাহিলেন না । দিন কুড়ি পরে বিপিন বাড়ী আসিয়া দেখিল, বলাই একটু স্বস্থ হইয়া উঠিয়াছে। বলাই বাড়ীর সকলের হাতে পায়ে ধরিয়া ধাদাকে মাংস খাওয়ার কথা বলিতে বারণ করিয়া দিয়াছিল। স্বতরাং বিপিনের কানে সে কথা কেহ তুলিল না। বিপিন এক দিন থাকিয়াই চলিয়া গেল । বলাই আবার কুপথ্য শুরু করিয়া দিল । কখনও লুকাইয়া কখনও বা বাড়ীর লোকের কাছে কামাকাটি করিয়া, আবদার ধরিয়া । মাস দুই এইভাবে কাটিবার পরে বিপিন পাঁচ ছয় দিনের ছুটি লইয়া বাড়ী আসিল । তাহার বাডী আসিবার প্রধান কারণ, পৈতৃক আমলের ভাঙা চণ্ডীমণ্ডপটি এবার খড় তুলিয়া ভাল করিয়া ছাইয়া লইবে । এ সময় ভিন্ন খড় কিনিতে পাওয়া যাইবে না পাড়াগায়ে। বাড়ী আসিয়া প্রথমেই বলাইকে দেখিয়া বিপনের বাড়ী আসিবার আনন্দ-উৎসাহ এক মুহুর্তে নিবিয়া গেল। একি চেহাঃ হইয়াছে বলাইয়ের ! চোখ মুখ ফুলিয়াছে, রঙ হলদে, পায়ের পাতাও যেন ফুলিয়াছে মনে হইল ; অথচ নেফ্রাইটিসের রোগী দিব্য মনের আনন্দে নিবিচারে পথ্য-অপথ্য খাইয়া চলিয়াছে । বিপিন কাহাকেও কিছু বলিল না, তাহার মন ভয়ানক খারাপ হইয়া গেল ভাইটার অবস্থা দেখিয়া । সেবার কিছু স্বস্ব দেখিয়া গিয়াছিল, কোথায় সে ভাবিতেছে, এবার গিয়া দেখিবে, ভাইটি বেশ সারিয়া সামলাইয়া উঠিয়াছে! সারিয়া ওঠা তো দূরের কথা, রাণাঘাট হাসপাতালে সেবার লইয়া যাওয়ার পূৰ্ব্বে যা চেহারা ছিল তাহার চেয়েও খারাপ হইয়া গিয়াছে। দুই দিন পরে বিপিন নদীর ধীরে মাছ ধরিতে যাইবে, বলাই বলিল, দাদা, আমিও খাব তোমার সঙ্গে ? বল তো যুগীপাড়া থেকে আর দ্বখানা ছিপ নিয়ে আসি । বলাই উঠিয়া হাটিয়া খাইয়া-দাইয়া বেড়াইত বলিয়া বাড়ীর লোকে হয়তো ভাবে, তবে অৰুখ এমন কঠিন আর কি ? কারণ পাড়াগায়ের ব্যাপার এই ষে, শষ্যাশায়ী এবং উথান