পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৪৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার לסיא বিপিন বলিল, তোমার ধরে ধান আছে তো চাল নিয়ে কি করবে ? মেয়েটি উঠানে দাড়াইয়া গল্প করিতে লাগিল। তাছার ভাই জন খাটিয়া খায়, কিন্তু তাহার হাপানির অস্থখ, দশ দিন খাটে তো পনরো দিন পড়িয়া থাকে। সংসারের বড় কষ্ট, সাত জন লোক এক এক বেলায় খায়, দু বেলায় চোদ জন । যে কয়টি ধান আছে, তাহাতে কয় মাস যাইবে ? সামান্ত কিছু মুম্বরি ছিল, তাহার বদলে চাল না লইলে চলে কি করিয়া ? এই সব প্ৰজা । ইহাদের নিকট খাজনা আদায় করিয়া তাহাকে চাকুরি বজায় রাখিতে হইবে। অনাদিবাবুর চাকরি লষ্টয়া সে মন্ত বড় ভুল করিয়াছে। এ সব জিনিস তাহার ধাতে নাই। বাবা কি করিয়া কাজ চালাইতেন সে জানে না, কিন্তু তাহার পক্ষে অসম্ভব । মানী ঠিক পরামর্শ দিয়াছে। ডাক্তারি শিখিতেই হইবে তাহাকে। ডাক্তারি শিখিলে এই সব গরীব লোকের অনেকখানি উপকার করিতেও তো পারিবে । এখানকার আর একজন প্রজার কাছে অনেকগুলি টাকা খাজনা বাকি। বিপিন সন্ধ্যার পরে তাহার বাড়ী তাগাদ দিতে গেল। গিয়া দেখিল, খড়ের ঘরের দাওয়ায় লোকটা শয্যাগত, মলিন লেপ কাথা গায়ে দিয়া গুইয়া আছে। তিন-চারটি পাড়ার লোক নায়েববাবুর আগমনসংবাদ শুনিয়া বাড়ীর উঠানে আসিয়া উপস্থিত হইল। রোগীর বিছানার পাশে ছুইটি স্ত্রীলোক বসিয়া ছিল, বিপিনকে দেখিয়া ঘোমটা টানিয়া দিল । লোকটির নাম বিত্ত ঘোষ, জাতিতে কৈবর্ত। বিপিনকে সে অনেকবার দেখিয়াছে, কিন্তু বিপিন দাওয়ায় উঠিয়া বসিতেই তাহার দিকে চাহিয়া বলিল, কে ? ছিয়াম ? তামাক দে, ছিরম খুড়োকে তামাক দে । বিপিন তো অবাক । পরে রোগীর চোখের দিকে চাহিয়া দেখিল, চোখ দুইটা জবাফুলের মত লাল । ঘোর বিকার । রোগী মাহুষ চিনিতে পারিতেছে না । বিপিন বলিল, ওর মাথায় জল দাও ! দেখছে কে ? একজন উত্তর দিল, ফকির সায়েব দেখছেন । —কোথাকার ফকির সায়েব ? ডাক্তার ? —আজ্ঞে না, তিনি ঝাড়ফুক করেন খুব ভাল। তিনি বলেছেন, উপরিভাব হয়েছে। বিপিন বুঝিতে না পারিয়া বলিল, উপরিভাব কি ব্যাপার ? দুই তিন জনে বুঝাইয়া দিবার উৎসাহে একসঙ্গে বলিল, আজ্ঞে, এই দৃষ্টি হয়েছে আর কি, অপদেবতার দৃষ্টি হয়েছে। —ভূতে পেয়েছে ? —ভূতে পাওয়া না ঠিক। দিষ্টি হয়েছে আর কি। বিপিনের যতটুকু ডাক্তারি-বিষ্ঠা এই কয়দিন বই পড়িয়া হইয়াছে, তাহারই বলে সে