পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আদর্শ হিন্দু হোটেল ১২১ টেপির মা কখনও এত বড় শহর দেখে নাই । এখানকার কাগুকারখানা দেখিয়া সে অবাক হইয়া গিয়াছে। মোটর গাড়ী, ঘোড়ার গাড়ী, ইন্টিশানে বিদ্যুতের আলো, লোকজনই বা কত! আর তাদের এড়োশোলায় দিনমানেই শেয়াল ডাকে বাড়ীর পিছনকার ঘন বঁাশবনে । সেদিন তো দিনদুপুরে জেলেপাড়ার কেষ্ট জেলের তিন মাসের ছেলেকে শেয়ালে লইয়া গেল । ইতিমধ্যে কুহুম আসিয়া একদিন উহাদের বেড়াই৩ে লইয়া গেল। কুসুমের সঙ্গে তাহারা রাধাবল্লভতল, সিদ্ধেশ্বরীতলা, চূণীর ঘাট, পালচৌধুরীদের বাড়ী—সব ঘুরিয়া ঘুরিয়া দেখিল । পালচৌধুরীদের প্রকাও বাড়ী দেখিয়া টেপির মা ও টেপি দু-জনেই অবাক । এত বড় বাউী জীবনে তাহার দেখে নাই । অতসীদের বাড়ীটাই এতদিন বড়লোকের বাড়ীর চরম নিদর্শন বলিয়া ভাবিয়া আসিয়াছে যাহারা, তাহদের পক্ষে অবাক হইবার কথা বটে । টেপির মা বলিল—না, শহর জায়গা বটে কুসুম ! গায়ে গায়ে বাড়ী আর সব কোঠাবাড়ী এদেশে। সবাই বড়লোক । ছেলেমেয়েদের কি চেহারা, দেখে চোখ জুড়োয় । হ্যারে, এদের বাড়ী ঠাকুর হয় না । পুজোর সময় একদিন আমাদের এনে মা, ঠাকুর দেখে যাবো । সে আর ইহার বেশী কিছুই বোঝে না । একটা বাড়ীর সামনে কত কি বড় বড় ছবি টাঙানো, লোকজন ঢুকিতেছে, রাস্তার ধারে কি কাগজ বিলি করিতেছে। টেপির মনে হইল এই বোধ হয় সেই টকি যাকে বলে, তাহাই। কুক্কমকে বলিল—কুকুম দি, এই টকি না ? —ই্যা দিদি । একদিন দেখবে ? —একদিন এনে না আমাদের। মা-ও কখনো দেখে নি—সবাই আসবে। একখানা ধাবমান মোটর গাডীর দিকে টেপির মা ই করিয়া চাহিয়া দেখিতে লাগিল, যতক্ষণ সেখানা রাস্তার মোড় ঘুরিয়া অদৃপ্ত না হইয়া গেল । কুহুম বলিল—আমার বাড়ী একটু পায়ের ধুলো দিন এবার জ্যাঠাইমা— কুম্বমের বাড়ী যাইতে পথের ধারে রেলের লাইন পড়ে । টেপির মা বলিল—কুসুম, দাড়া মা একখান রেলের গাড়ী দেখে যাই— বলিতে বলিতে একখানা প্রকাণ্ড - মালগাড়ী আসিয়া হাজির ৷ টেপি ও টেপির মা দু-জনেই একদৃষ্টি দেখিতে লাগিল। গাড়ী চলিয়াছে তো চলিয়াছে—তাহার আর শেষ নাই। উঃ, কি বড় গাড়ীট ! কুহুম বলিল—জ্যাঠাইমা, রাণাঘাট ভাল লাগচে ? —লাগচে বৈকি, বেশ জায়গা মা ! আসলে কিন্তু এড়োশোলার জন্য টেপির মায়ের মন কেমন করে । শহরে নিজেকে সে এখনও খাপ খাওয়াইতে পারে নাই। সেখানকার তালপুকুরের ঘাট, সদা বেষ্টিমের বাড়ীর পাশ দিয়া যে ছোট নিতৃত পথটি বাশবনের মধ্য দিয়া বাড়ুষ্যে-পাড়ার দিকে গিয়াছে, দুপুর