পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার ૨૯ છે —তা দেখে বুঝতে পারছ না? আজই হয়ে যাবে। আর দেরি নেই। শীগগির করে স্বাটে যাও। মনোরমা নিঃশব্দে কাদিতে লাগিল। বিপিন বলিল—কেঁদে কি হবে, এখন যা করবার আছে করে ফেল। মায়ের সামনে যেন কেঁদো না, ঘাটে যাও চলে । মনোরমার একটা অভ্যাস সংসারের মধ্যে যে যে আছে তাহদের সকলকেই সে ভালবাসে, স্নেহ করে—ম, বীণা ঠাকুরঝি, ঠাকুরপো,—সকলেরই মুখস্থবিধা দেখা তাহার চিরকালের অভ্যাস। এই সাজানো সংসারের মধ্য হইতে বলাই ঠাকুরপে চলিয়া গেলে সংসারের কতখানি চলিয়া যাইবে । সে চিস্তা মনোরমার পক্ষে অসহ । বিপিন ভাইয়ের সামনে গিয়া বসিল। বীণাকে বলিল—যা বীণা, ঘাটে যা—আমি আছি বসে । মাকে নিয়ে যা । সত্যি, এতটুকু মেয়ে বীণা কয়দিন কি অক্লাস্ত পরিশ্রম করিতেছে, সমানে রাত জাগিতেছে —ম ও উহার বৌদিদির সঙ্গে। দেবীর মত সেবা করিতেছে ভাইয়ের, অথচ কি অভাগিনী ! জীবনে সে কখনো যাহা পায় নাই—অথচ যার জন্য তার বালিকা মন বুভূক্ষু, অপরের নিকট হইতে তারই এককণা পাইবার নিমিত্ত অভাগিনীর কি ব্যর্থ আগ্রহ ! নিজেকে দিয়া বিপিন বোঝে এ নিদারুণ বুভুক্ষ। সকলে আহারাদি শেষ করিয়া লইয়া বলাইয়ের কাছে বসিল । বলাইয়ের গত দুই দিন কোনো জ্ঞান ছিল না—যন্ত্রণায় চীৎকার করে মাঝে মাঝে কিন্তু মানুষ চিনিতে পারে না। বিপিনের মা খুব শক্ত মেয়ে—তিনি সবই বুঝিয়াছিলেন, অথচ এ পর্য্যস্ত র্তাহার চোখে জল পড়ে নাই—বরং বীণা ও মনোরম কাদিলে তিনি কালও বুঝাইয়াছেন। আজ কিন্তু দুপুরের পর হইতে তিনি অনবরত কঁাদিতেছেন। বীণা ডোবার ধারে বাসন লইয়া গিয় ছিল। ডোবার ওপারের ঘাটে রায়-বেী ও নিবারণ মুখুজ্জের বড়মেয়ে নলিনী কথা বলিতেছিল। নলিনী হাত পা নাড়িয়া বলিতেছে—তা হবে না ওরকম ? বাড়ীতে বিধবা মেয়ের ওই রকম অনাচার ভগবান সহি করেন । জলজ্যাস্ত ভাইট ধড়ফড় করে মরলো চোখের সামনে । এখনও চন্দ্র স্থৰ্য্য আছেন—অনাচার ঢুকলে সে সংসারে মঙ্গল হয় কখনো! বীণা জলে নামিতে পারিল না—জলের ধারে কাঠের মত দাড়াইয়া রহিল। উহার। বীণাকে দেখিতে পায় নাই—বীণা কিছুক্ষণ দাড়াইয়া থাকিয়া বাসন লইয়া চলিয়া আসিল –চোখের জল সামলাইতে পারিল না ফিরিবার সময়। পটলদা’র সঙ্গে কথা বলা অনাচার! এ ছাড়া আর কি অনাচার সে করিয়াছে ? ভগবান তো সব জানেন। তাহারই পাপে ছোড়দা মরিতে বসিয়াছে -একথা যদি সত্য হয় -সে পিতল-কাসা হাতে শপথ করিয়া বলিতেছে, আর কোন দিন সে পটলার মুখ দেখিবে না। ভগবান ছোড়দাকে বঁাচাইয়া দিন। কিন্তু ভগবান তাহার অকুরোধ রাখিলেন না। বৈকাল পাচটার সময় বলাই মারা গেল ।