পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার "ఆన জন্য ভাবে না, তাহার মুখের কথা শুনিবার অত আগ্রহ দেখায় না, সংসারে কে তাহার জন্য ভাবিয়া মরিতেছে ? কোন আলো আছে তাহার জীবনে ?-- এই শূন্ত, অন্ধকার জীবনের মধ্যে তবুও পটল-দ। তাহার সঙ্গে একটু কথা কহিবার ব্যাকুল আগ্রহে রাত্রি, অন্ধকার, সাপের ভয়, মশার কামড়, লোকনিন্দা অগ্রাহ করিয়া চোরের মত দাড়াইয়া থাকে, ভাঙা কোঠার পাশের জঙ্গলের মধ্যে—যেখানে বিছুটি জঙ্গল এমন ঘন ষে দিনমানেই যাওয়া যায় না! তাও দাড়াইয়া দাড়াইয়া বৃথা ফিরিয়া গেল। চোখের দেখাও তো তাহাকে দেখিতে পায় নাই । নিজের স্বামীকে বীণা মনে করিতে পারে—খুব সামান্য, অস্পষ্টভাবে। এগার বৎসর বয়সে বীণার বিবাহ হয়। এক বৎসর পরে বাপের বাড়ী থাকিতেই একদিন সে শুনিল স্বামীর মৃত্যু হইয়াছে। মনে আছে, বেশ ছেলেটি। খুব অল্পদিন দেখাশোনা হইয়াছিল। কোথায় স্কুলে পড়িত, শ্বশুরশাশুড়ী তাহাকে বাড়ী বেশীদিন থাকিতে দিতেন না—স্কুল-বোডিং-এ পাঠাইয়া দিতেন । সে-সব আজকার কথা নয় -বীণার বয়স এখন তেইশ চব্বিশ—বারো বছর আগের কথা, স্বপ্ন হইয়া গিয়াছে। হঠাৎ বীণা দেখিল সে কাদিতেছে—হাপুস নয়নে কাদিতেছে, বালিশের একটা ধার একেবারে ভিজিয়া গিয়াছে চোখের জলে । (t দেন। জড়াইয়া গিয়াছে একরাশ । কোনো দোকানে আর ধার পাইবার জো নাই। কৃষ্ণলাল চক্রবর্তী সংসারের বন্ধু, দুবেলাই যাতায়াত করেন, খোজ খবর যা লইবার, তিনিই লইয়া থাকেন, অন্য লোকে বড় একটা ইহাদের লইয়া মাথা ঘামায় না । সেদিন সন্ধ্যাবেলা রোয়াকে বসিয়া কথাবাৰ্ত্তা কহিতে কহিতে কৃষ্ণলাল বলিলেন, পলাশপুর বাবার তোমার আর দেরি কিসের হে বিপিন ? বেরিয়ে পড়, চলে যাও এবার। তোমার দোষ একবার বাড়ী এসে চেপে বসলে তুমি নড়তে চাও না। —আপনার কাছে আর লুকোব না কাকা, চাকুরি গিয়েছে আজ মাস খানেক হোল, অনাদিবাৰু চিঠি লিখে জানিয়েছিলেন যদি আমি এক ইথার মধ্যে না ফিরি, তিনি অন্য লোক রাখতে বাধ্য হবেন। সে চিঠির উত্তর দিই নি । —চিঠির উত্তর দা ও নি ? না খেতে পেয়ে কষ্ট পাচ্চ সে ভালো খুব, না ? তোমার উপায় যে কি হবে আমি কিছু বুঝি নে বাপু ! না, শোনো, আমার মনে হয় তোমার চাকুরি এখনও যায় নি। নতুন লোক খুজে পাওয়া শক্তও বটে, আর বিশ্বাস বাকে তাকে করাও স্বায় না বটে। তুমি যাও, কাল সকালেই দুর্গ বলে বেরিয়ে পড়।