পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার ❖ግ » না, বিপিন আর কিছু বলিবে না। সে সামলাইয়া লইয়াছে নিজেকে। কৃষ্ণলালের প্রশ্নের উত্তরে সংক্ষেপে বলিল, হঁ্য। তাহার বুকের মধ্যে ধড়াল ধড়াস করিতেছে, কেমন এক প্রকারের উত্তেজনা। মানীর কথা এতদিন কাহারও সহিত হয় নাই, অনেক জিনিস চাপ পড়িয়াছিল। হঠাৎ অনেক কথা, অনেক ছবি তাহার মনে পড়িয়া গেল মানীর সম্বন্ধে। কান দুটা ধেন গরম হইয়া উঠিয়াছে, লাল হইয়া উঠিয়াছে কি দেখিতে ? কৃষ্ণলাল কি দেখিতে পাইতেছেন ? দিন পনেরো পরে। রাত্রে একদিন মনোরম বলিল, তোমায় তো কোনো কথা বললেই চটে যাও । কিন্তু আমার হয়েচে যত গোলমাল, ঝক্কি পোয়াচ্ছি আমি । তিন দিন কাঠ হাতে করে এর-ওর বাড়ী থেকে চাল ধার করে আনি, তবে হাড়ি চড়ে । আমি মেয়েমাতুষ, ক’দিন বা আমাকে লোকে দেয় ? পাড়ায় আর ধার পাওয়া যাবে না, এবার বে-পাড়ায় বেরুতে হবে কাল থেকে । তা আর কি করি, কাল থেকে তাই করবো! ছেলেগুলো উপোস করবে, মা উপোস করবেন, এ তো চোখে দেখতে পারবো না ! মনোরমার কথাগুলি খুব ন্যাধ্য বলিয়াই বোধ হয় বিপিনের কাছে তিক্ত লাগে । সে ঝাজের সহিত বলিল, তা এখন তোমাদের জন্যে চুরি করতে পারবো না তো। না পোষায়, ভাইকে চিঠি লিখো, দিনকতক গিয়ে বাপের বাড়ী ঘুরে এসো। সোজা কথা আমার কাছে। মনোরম কাদিতে লাগিল । না:, বিপিনের অার সহ হয় না। কি যে সে করে । চাকুরি তাহার নিজের দোষে ষায় নাই। বলাইয়ের অস্বথ, বলাইয়ের মৃত্যু, বীণার ব্যাপার, নানা গোলযোগ । সে ইচ্ছা করিয়া চাকুরি ছাড়িয় আসে নাই। অথচ স্ত্রী দেখিতেছে সবটাই তাহার দোষ । রাত্রি অনেক হইয়াছে। পল্লীগ্রামের লোক সকালে সকালেই শুইয়া পড়ে। কোনো দিকে কোনো শব্দ নাই | উত্তর দিকের ভাঙা জানালাটার ধারেই তক্তপোশখানা পাতা। বিপিন উঠিয়া দালান হইতে তামাক সাজিয়া আনিয়া তক্তপোশের উপর বসিয়া জানাল দিয়া বাহিরের দিকে চাহিয়া স্থক টানিতে লাগিল । জানালার বাহিরের কোঠার গায়ে লাগানো ছোট তরকারীর ক্ষেত, বলাই গত চৈত্র মাসে কুমড়া পুতিয়াছিল। এখন খুব বড় গাছ হইয়া অনেকখানি জায়গা জুড়িয়া লইয়াছে বাগানে। তরকারীর ক্ষেতের পর তাহাদের কাঠাল গাছ, তারপর রাস্তা, রাস্তার ওপারে নবীন বঁাডুয্যের বঁাশঝাড় ও গোহাল। ঘন ঠাস্-বুনানি কালো অন্ধকার বঁাশঝাড়ের সর্বাঙ্গে অসংখ্য জোনাকি জলিতেছে। মনোরমার উপর তাহার সহানুভূতি হইল। বেচারী অবস্থাপন্ন গৃহস্থ ঘরের মেয়ে,