পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/২৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংসার २१७ মনোরম বলিল, তুমি এস গিয়ে, আমাদের ভাবনা আমরা ভাব বে। — ঠিক ? সে ভার নেবে তো ? —না নিয়ে উপায় কি বল । দিন চার পাচ পরে বিপিন ছোট একটি টিনের স্কটকে হাতে করিয়া পিপলিপাড়া রামনিধি দত্ত মহাশয়ের বহিৰ্ব্বাটিতে আসিয়া উপস্থিত হইল। বেলা প্রায় বারোটা বাজে । সকালে বাড়ী হইতে বাহির হইয়া হাটতে স্থাটিতে আসিয়াছে। পায়ে এক পা ধূলা, গায়ের কামিজটি ঘামে ভিজিয়া গিয়াছে । রামনিধি দত্তের বাড়ী দেখিয়া সে কিছু হতাশ হইল। ভাঙা পুরানো কোঠাবাড়ী, বহুকাল মেরামত হয় নাই, কানিসে স্থানে স্থানে বট অশ্বখের চারা গজাইয়াছে। আর কি ভয়ানক জঙ্গল গ্রামটিতে ! শুধু আমের বাগান আর ঘন নিবিড় বঁাশবন । দত্ত মহাশয়কে পূৰ্ব্বে সে একখানা চিঠি লিথিয়ছিল, তিনি বিপিনকে আসিতেও লিখিয়াছিলেন ; তবুও নতুন অচেনা জায়গায় আসিয়া বিপিনের কেমন বাধা বাধা ঠেকিতে লাগিল, বাহিরবাটী চণ্ডীমণ্ডপে উঠিয়া সে স্কটকেসটি নামাইয়া একখানা হাতল-ভাঙা চেয়ারের উপর বসিয়া চারিদিকে একবার চাহিয়া দেখিল। চণ্ডীমণ্ডপটি সেকালের, দেখিলেই বোঝা যায় । নিম কাঠের বড় কড়ি হইতে একটা কাঠের বিড়াল ঝুলিতেছে, সেকালের অনেক চণ্ডীমণ্ডপে এ রকম বিড়াল কিংবা বাঙ্গর ঝুলিতে বিপিন দেখিয়াছে । একদিকে রাশীকৃত বিচালি, অন্যদিকে একখানা তক্তপোশের উপর একটা পুরানো শপ, বিছানো। ঘরের মেঝেতে একস্থানে তামাক থাইবার উপকরণ—টিকে, তামাক, হক, কলিকা। ইহা ব্যতীত অন্য কোন আসবাব চণ্ডীমণ্ডপে নাই । রামনিধি দত্ত খবর পাইয়া বাহিবুে আসিয়া বলিলেন—আপনিই ডাক্তারবাৰু ? ব্রাহ্মণের চরণে প্রণাম । আমুন আহন। বড় কষ্ট হয়েছে এই রোদ রে ? বৃদ্ধ বিবেচক লোক, অল্প কিছুক্ষণ কথা বলিবার পর তিনি বলিলেন, আপনি বস্থন, আমি জল পাঠিয়ে দিই হাত পা ধোবার। জামা খুলে একটু বিশ্রাম করুন, তারপরে পাশেই নদী, ওই বঁাশ-ঝাড়টার পাশ দিয়ে রাস্তা। নেয়ে আসবেন এখন। তেল পাঠিয়ে দিচ্ছি। স্বান করিতে গিয়া নদীর অবস্থা দেখিয়া বিপিন প্রমাদ গণিল । কচুরীপানার দামে স্বানের ঘাটের জল পৰ্য্যস্ত এমন ছাইয়া ফেলিয়াছে যে, জল দেখাই যায় না। জল রাঙা, স্নান করিয়া উঠিলে গা চুলকায়। কোনরকমে স্নান সারিয়া সে ফিরিল। বৃদ্ধ বলিলেন, এত বেলায় বান্না করতে গেলে আপনার যদি কষ্ট হয় তবে বলুন চিড়ে আছে, দুধ আছে, ভাল কলা আছে, নারকোলকোরা আছে, আনিয়ে দিই। ওবেলা বরং সকাল সকাল রান্নার ব্যবস্থা করে দেব এখন । ইতিমধ্যে দশ-এগারো বছরের একটি ছেলে একখান রেকাবিতে একপাশে খানিকটা নারিকেলকোরা আর এক পাশে একটু গুড় লইয়া আসিল। বুদ্ধ বলিলেন, জল খেয়ে বি. র, ৬—১৮