পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩০৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*ఏe বিভূতি-রচনাবলী আনিয়া সামনে রাখিয়া সলজ্জ কৈফিয়তের স্বরে বলিল, আচারের হাড়ি, যে সে কাপড়ে তো ছোবার জো নেই, দেরি হয়ে গেল। এই যে করমচার আচার, এ আমি আর বছর করে রেখে গিয়েছিলাম, বাবা খেতে বড় ভালবাসেন । দেখুন তো চেখে, ভাল আছে ? —বাং, বেশ আছে। তুমি আচার করতে জানো বড় চমৎকার দেখচি যে— • মেয়েটি লাজুক হাসি হাসিয়া বলিল, এমন আর কি করতে জানি, মা থাকতে শিখিয়েছিলেন। শ্বশুরবাড়ীতে আমার শাশুড়ীও অনেক রকম আচার করতে জানেন। এ চড়ের আচার পর্যন্ত । —আর কি কি আচার জানো ? —আমের জানি, নেবুর জানি, নংকার জানি— —নংকার আচার বড় চমৎকার হয়, একবার খেয়েছিলাম — —চি ড়ে আর দুটো নেবেন ? —পাগল ! পেট ভরে গিয়েচে, দুধ জাল দেওয়া হয়েছে একেবারে ঘন ক্ষীর করে— খাওয়া শেষ করিয়া বিপিন বাহিরে আপিল। ভাবিল, বেশ মেয়েটি। এমন দয়া শরীরে, এমন মমতা, যেন নিজের বোনটির মত বসে বসে খাওয়ালে । মানীর কথা মনে পড়িল ৷ মানী ও এই মেয়েটি যেন এক ছাচে ঢালাই, তবে প্রভেদও আছে, মানী মনে প্রেম জাগায় আর এ জাগায় স্নেহ ও শ্রদ্ধা । কিছুক্ষণ পরে মেয়েটি একটা নেকুড়ায় জড়ানো গোটাকতক পান আনিয়া বিপিনের হাতে দিয়া বলিল, পান ক'টা নিয়ে যান, রদ্যুরে জলতেষ্ট পাবে। পথের জল খাবেন না কোথাও । কবে ফিরবেন ? বিপিন উঠানেই দাড়াইয়া ছিল, বলিল, আজ আর বাড়ী যাবো না ভাবচি । মেয়েটি অবাক হইয়া বলিল, যাবেন না ? —না, তাই বেলা দেখছিলাম এখানে দাড়িয়ে । এত দেরিতে বেকুলে পথেই রাত হবে। —তবে যাবেন না আজ । মিছিমিছি চি ড়ে খেলেন কেন, কষ্ট পাবেন সারাদিন । —ফাকি দিয়ে চিড়ের ফলার করে নিলাম। রোজ তে অদৃষ্টে এমন ফলার জোটে না— মেয়েটি সলজ্জ হাসিয়া বলিল, তা কেন, ভালবাসেন চিড়ের ফলার । কালই আবার খাবেন । বিপিনের ভারি ভাল লাগিল মেয়েটির এই কথাটা। এই অল্পক্ষণের মধ্যে মেয়েটি তার সরস মন ও কথারওঁrর গুণে বিপিনকে আকৃষ্ট করিয়া ফেলিয়াছে। মেয়েটি বাড়ীর মধ্যে চলিয়া গেলেও বিপিনের মনে হইতে লাগিল, আবার যদি সে আলে, তবে বেশ ভাল হয়। বিপিনের এ ধরণের মনের ভাব হয় নাই অনেক দিন । কিন্তু বন্ধক্ষণ সে আসিল না। না আম্বক, বিপিন আর জালে জড়াইবে না। কেহই শেষ পৰ্য্যন্ত টেকে না ওরা। কেবল নাড়া দিয়া যায় এই মাত্র। কষ্টও দিয়া যায় খুব। মানী যেমন গিয়াছে, এও তেমনি চলিয়। যাইবে। দরকার কি এই সব আলেয়াৰ পিছনে ছটিয়া?