পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\Qо о বিভূতি-রচনাবলী অনেক রাত পৰ্য্যন্ত সতীশ ডাক্তার রহিল। পটল যথেষ্ট উপকার করিল, ছোটাছুটি করা, ইহাকে উহাকে ডাকাডাকি করা। রাত দুপুর পর্য্যন্ত সে বিপিনদের বাড়ীতেই রহিল। বিপদের সময় অন্ত কথা মনে থাকে না—গরম জল আনিতে পটল কতবার রান্নাঘরে গেল— বীণা যেখানে একাই ছিল, ছেলেমেয়েদের ও দাদার জন্য রান্না না করিলে তাহারা খাইবে কি ? বীণার মা বউয়ের শিয়রে সন্ধ্যা হইতে বসিয়া আছেন আর হাপুম নয়নে কাদিতেছেন । 8 চারদিন পরে বিপিন মনোরমাকে বলিল—কাল যাব গো, এসেছিলাম দুটো দিন থাকবো বলে —তুমি যে ভয় দেখিয়ে দিলে, তাতে দেরি হয়েই গেল এমনি মনোরমা হাসিয়া বলিল, ম’লেই বেশ হোত, না ? —না না, ওসব কথা বলতে নেই। ঘরের লক্ষ্মী মরতে যাবে কেন ? ছিঃ ! মনোরমা একটু অবাক হইয়া স্বামীর দিকে চাহিল। এত আদরের কথা সে স্বামীর মুখে কতকাল শোনে নাই। ভাগ্যিস সাপে কামড়াইয়াছিল ! উঃ– মুখে বলিল, ছেলেমেয়ে দুটাে ছোট ছোট-নয়তো আর কি ? তোমায় রেখে যেতে পারা তো ভাগ্যির কথা গো । বিপিন বলিল, আর আমার জন্তে বুঝি কিছু না ? মনোরমা হাসিল । সে গুছাইয়া কথা বলিতে পারে না কোনো কালেই, মনের মধ্যে কি আছে বুঝাইতে পারে না। সে বোঝে কাজকৰ্ম্ম, খাওয়ানো মাখানে, নিখুঁতভাবে সংসার চালানো । স্বামীকে সে ভালবালে কি না বাসে, তা কি মুখে বলা যায় ? ছেলেমেয়ের মা, এখন সে গিন্নিবান্নি মানুষ, অমন ইনাইয়া বিনাইয়া কথা বলা তাহার আসে না । বলিল, না গো তা নয়। আমি মরে গেলে তুমি আর একটা বিয়ে করে মুখী হতে পারে - কিন্তু ওরা আর মা পাবে না । বিপিন দুঃখিত হইল। সত্যই আজ যদি মনোরমা মারা যাইত। কখনো সে মনোরমাকে একটা মিষ্টি কথা কি ভালবাসার কথা বলিয়াছে ? না পাইয়া না পাইয়া মনোরমার সহিয়া গিয়াছে। ও সব আর সে প্রত্যাশ করে না, পাইলে অবাক হইয়া যায়। মনে ভাবিল— আমার হাতে পড়ে ওর দুর্দশার একশেষ হয়েছে। ভাল খাওয়া কি ভাল কাপড় একখানা কোনদিন—বা কখনও কিছু দেখলেও না । সংসারের ইড়ি ঠেলে আর বামন মেজে জীবনটা কাটলে ওর । সে বলিল, হঁ্য, ভাল কথা। কাল দুটো ভাত সকালে সকালে যেন হয়। পিপলিপাড়া যাব কাল ৷