পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

€6ు বিভূতি-রচনাবলী বর্ণনা শেষ হইয়া গেলে শান্তি দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া বলিল, উঃ, ভগবান রক্ষে করেছেন। নইলে কি হোত আজ বলুন দিকি ? মুড়ি খান, আমি চা নিয়ে আসি—কি বিপদেই পড়ে গিয়েছিলেন ! শান্তি চা আনিয়া দিল । বলিল, আজ আর রাধতে হবে না আপনাকে-আমাদের তো রান্না হবেই- ওই সঙ্গে আপনাকে দুখান পরোটা ভেজে দিতে এমন কিছু বঞ্চাট হবে না । —রোজ রোজ তোমাদের ওপর— —ওসব কথা বলবেন না ডাক্তারবাবু আপনি পর ভাবেন, কিন্তু আমি--- --না না, সে কথা না - পর ভাববো কেন শাস্তি ? তা হবে এখন :--দিও এখন— শান্তি খানিকক্ষণ দাড়াইয়া দাড়াইয়া গল্প করিল। কথা বলিয়া আনন্দ পাওয়া যায় ইহার সঙ্গে । বেশির ভাগ কথা মনোরমাকে লইয়াই। মনোরমার কথা আজ আসিবার সময় বিপিন সারাপথ ভাবিয়াছে। তাহার আকস্মিক মৃত্যুর সম্ভাবনাটা যতই মনে হইতেছে, বিপিনের মন ততই মনোরমার প্রতি স্নেহে ও সহানুভূতিতে ভরিয়া উঠিতেছে। শাস্তি বলিল, দেখাবেন একদিন বৌদিদিকে ? —কি করে দেখাবো শান্তি ! সে তো এখানে আসছে না । —আমায় একদিন নিয়ে চলুন সেখানে । —তুমি যাবে কি করে ? --আপনার সঙ্গে যাবো । গরুর গাড়ী একখানা না হয় দুটাক ভাড়া নেবে। —আমার সঙ্গে এক যাবে ? —কেন যাবো না ? বিপিন আশ্চৰ্য্য হইল শাস্তির নিঃসঙ্কোচ ভাব দেখিয়া। মেয়েটি শুধু সরলা নয়, ইহার মনে সাহস আছে । অবশ্য সে শাস্তিকে সত্যই লইয়া যাইতেছে না, বহু বাধা তাহাতে, সে জানে। তবুও শান্তি যে নিঃসঙ্কোচে তাহার সহিত যাইতে চাহিল-ইহাতেই উহার মনের পরিচয় পাওয়া যায় । হঠাৎ শাস্তি একটি ভারি ছেলেমামুধি প্রশ্ন করিল। —আচ্ছা, পটলের ক্ষেতে মেয়েমানুষ যাওয়া বারণ কেন জানেন ? —ত তো জানি না শাস্তি । তবে শুনেছি বটে— বিপিন কারণটা খুব ভাল রকমই জানে, সে পাড়াগায়েরই ছেলে । কিন্তু শান্তির সামনে সে কথা বলিতে তাহার বাধিল । শান্তি দুষ্টুমির হাসি হাসিয়া বলিল, আমি জানি। বলবো ? মেয়েমানুষ অযাত্রা, পটলের ক্ষেতে ঢুকলে পটল ফলবে না—তাই নয়? আচ্ছা, মেয়েমানুষ কি সত্যিই অযাত্রা ? বিপিন সঙ্কুচিত হইয়া পড়িল। বলিল, কে বলেছে ওসব কথা ? এ কথা তোমার মাথায় উঠলো কেন হঠাৎ ?