পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিভূতি-রচনাবলী שצb\ এ না করলে গেরস্ত ঘরে চলে কি, বলুন আপনি ? এখন ধরুন আমার শ্বশুরের তিন গোল ধান হয় বছরে, রোজ ধান ভানা, চি ড়ে কোটার জন্তে কাকে আবার খোশামোদ করে বেড়াবো ? ওই মতির মা আছে আর আমি আছি— —বেশ গাখানা তোমাদের, বেড়িয়ে এলাম— —চড়কতলার দিকে গিয়েছিলেন ? —চিনি তো নে, কোন তলা। এমনি খানিকটা ঘুরলাম— শাস্তি উঠিয়া বলিল, দাড়ান, আপনার চা করে আনি, এখানে বসে খাবেন আর গল্প করবেন, মতির মা রাখো । আমি আসি আগে, যাবো আর আসবো— চা ও খাবার লইয়া সে খুব শীঘ্রই ফিরিল বটে। বিপিন বলিল, হালুয়া গরম রয়েচে, এখন করে আনলে নাকি ? —আমি না, মা করেচেন। আমি শুধু চা করে আনলাম, সেকেলে বুড়ী, চা করতে জানেন না। ভারি আমোদ হচ্ছে আমার, আপনি এসেচেন বলে । —সত্যি ? —সত্যি না তো মিখ্যে ? রাত্রে আপনাকে আর রাধতে হবে না, আমি লুচি ভেজে দেবো । —কেন, আমি ভাত রেখেই নিতাম, আবার লুচির হাঙ্গামা— —হাঙ্গামা কিছু না। আমার শ্বশুরবাড়ীরা বড়লোক, এদের এক কাড়ি টাকা আছে, খাইয়ে দিলাম বা কিছু টাকা বাপের বাড়ীর লোককে ? শাস্তির কথার ভঙ্গি শুনিয়া বিপিন হাসিয়া উঠিল, প্রৌঢ়া মতির মাও অন্ত দিকে মূখ ফিরাইয়া (কারণ বিপিনের সামনে হাসা তাহার পক্ষে অশোভন ) হাসিয়া বলিল—কি যে বলেন বড় খুড়ীমা আমাদের ! শুনতেই এক মজা । শাস্তি যে এমন হাসাইতে পারে, বিপিন তাহা জানিত না, রসিকা মেয়ে সে খুব পছন্দ করে ; পছন্দ করে বলিয়াই এটুকু জানে, ভাল হাসাইতে পারে এমন মেয়ের সংখ্যা বেশী নয়। শাস্তির একটা নূতন দিক যেন সে দেখিল। শান্তি ছেলেমানুষের মত আবদারের স্বরে বলিল, একটা ভূতের গল্প বলুন না ? —ভূতের গল্প! নাও ধান ভেনে, আর এখন রাত্তির দুপুরে ভূতের গল্প করে না। —না বলুন। বিপিন একটা গল্প বানাইয়া বলিল। অনেক দিন আগে কাহার মুখে একটা গল্প শুনিয়াছিল, সেটিও বলিল। চাদ এবার অনেকদূর উঠিয়াছে, বিপিন শাস্তির সহিত গল্পের ফাকে ফাকে ভাবিতেছিল মানীর কথা, মৃত বাগদী মেয়েটির কথা, মনোরমার কথা, কামিনী মাসীর কথা । মানীর সঙ্গে এই রকম ভাবে গল্প করিতে পারিত এই রকম সন্ধ্যায় ! না তাহা হইবার নয়। মানীর শ্বশুরবাড়ী এরকম পাড়াগায়েও নয়, মানী এরকম বলিয়া বসিয়া ধানও ভানিবে না।