পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিপিনের সংস্কার પરિણ শাস্তিকে এক লইয়া আর কোনোদিন সে বাহির হইবে না। শাভি তাহাকে জালে জড়াইতে চায় । কিন্তু বিপিন আর নিজেকে কোন বন্ধনের মধ্যে ফেলিতে চায় না। মনের দিক হইতে স্বাধীন না থাকিলে সে নিজের কাজে উন্নতি করিতে পারিবে না। এই তো, কাল আর্চার সাহেবকে বলিয়া আসিয়াছে, হাসপাতালে একটি শক্ত অস্ত্রোপচার করা হইবে একটি রোগীর, বিপিন কাল দেখিতে যাইবে । তবুও যতটুকু শেখা যায়। শাস্তিকে লইয়া খানিক এদিক ওদিক ঘুরিয়া বলিল,—চল এবার বাসায় যাই— —আর একটুখানি থাকুন না 7 বেশ লাগচে । একখানা ট্রেন কলিকাতার দিক হইতে আসিয়া দাড়াইল এবং কিছুক্ষণ পরে ছাড়িয়া চলিয়া গেল। বহু যাত্রী উঠিল, বহু যাত্রী নামিল । শাস্তি এসব অবাক চোখে চাহিয়া দেখিতেছিল । সে এসব ভাল করিয়া কখনো দেখে নাই, দু-তিন বার সে রেলে চড়িয়া এখান ওখান গিয়াছে—একবার গিয়াছিল শিমুরালি গঙ্গস্বানের যোগে মা-বাবার সঙ্গে, তখন তাহার বয়স মোটে এগার বছর, আর একবার স্বামীর সঙ্গে পিস্তুতো ননদের ছেলের বিবাহে এই লাইনে গিয়াছিল খামনগর মুলাজোড়। সেও অঙ্গ দু-তিন বৎসর হইয়া গিয়াছে। কিন্তু এমন করিয়া যদৃচ্ছাক্রমে বেড়াইয়া কখনও সে এত বড় ইষ্টিশানের কাগুকারখানা দেখে নাই । বিপিনের নিজেরও বেশ লাগিতেছিল। কোথায় পড়িয়া থাকে বারো মাস, কোথা হইতে এ সব দেখিবে ? রাণাঘাটের মত শহর বাজার জায়গায় থাকিতে পাইলে সামান্ত টাকা রোজগার হইলেও মুখ। পাচ জনের সহিত মিশিয়া পাঁচটা জিনিস দেখিয়া স্বখ। সে কথা শান্তিকে সে বলিল । শান্তি বলিল,—সত্যি। আচ্ছ, আমরা কোথায় পড়ে থাকি ডাক্তারবাবু, গরুর মত কিংবা মোষের মত দিন কাটাই । কি বা দেখলাম জীবনে, আর কি বা— —সত্যি, কি দেখতে পাই ? —শুনতেই বা কি ? এই যে ধরুন আজ টকি দেখলাম, এ কেউ দেখেছে আমাদের গায়ে কি আমাদের শ্বশুরবাড়ীর গায়ে ? আহা, ও বোধ হয় দেখেনি, ও কাল দেখুক এসে । —কে, গোপাল ? গোপাল কখনো টকি দেখেনি ? —কোথেকে দেখবে! আপনিও যেমন! ওরা কেউ দেখেনি। কাল পাঠিয়ে দেবে। বিকেলে । —আমিও সত্যি বলচি শাস্তি—এই প্রথম দেখলাম টকি । বায়োস্কোপ দেখেছি অনেক দিন আগে—সে তখনকার আমলে ! বাবার পয়সা তখনও হাতে ছিল, একবার কলকাতায় গিয়ে বায়োস্কোপ দেখি । তখন টকি হয় নি। তারপর বহুকাল হাতে পয়সা ছিল না, নানা গোলমাল গেল --- বিপিন নিজের জীবনের কথা এত ঘনিষ্ঠ ভাবে কখনও শাস্তির কাছে বলে নাই। শাস্তির