পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

< © e বিভূতি-রচনাবলী প্রতুল বিস্মিত হইল। কণার এ উত্তর সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত তাহার কাছে। বলিল, হয় না কণা ? কণা মাটির দিকে চোখ রাখিয়া পূর্ববং নিয়ম্বরে বলিল, হয় না প্রতুলম্বা। কারণ আছে অবিশুি । কিন্তু সে কথা বলবো না। বিয়ে হতে পারে না । কেন ? কণা কি অন্য কোন যুবককে ভালবাসে ? কই, আর কোন যুবককে তো প্রতুল কোনদিন উহাদের বাড়ীতে যাওয়া আসা করিতে দেখে নাই ? ব্যাপার কি ? —কারণটা জানতে পারলে বড় ভাল হতো, কণী । খুব বেশী বাধা কিছু আছে কি ? -े । —কারণটা বলবে ? —আপনি কিছুই জানেন না ? দ্বাদ কিছু বলেনি আপনাকে ? প্রতুল আরও বিশ্বিত হইল। কি জানিবে সে ! শশধরই বা তাহাকে কি বলিবে! অত্যন্ত আগ্রহ ও কৌতুহলের সঙ্গে সে বলিল—না কণা, তুমি কি বলচো আমি কিছুই বুঝতে পারচিনে । শশধর কি বলবে আমায় ? —আমি বিধবা । —তুমি ! —হঁ্যা, আট বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়—তেরো বছর বয়সে—এই পাঁচ বছর হলো । প্রতুলের মাথা বন বন করিয়া ঘুরিতে লাগিল যেন। সৰ্ব্বশরীর যেন ঝিম্ ঝিম্ করিতেছে। কণা বিধবা । কণার বিবাহ হইয়াছিল আট বছর বয়সে। অদৃষ্টের কি দারুণ পরিহাস ! আর সে কত আকাশ-কুসুম না রচনা করিয়াছে মনে মনে এই কণাকে লইয়া...ইহাদের প্রতি মনে মনে কত অবিচার করিয়াছে তাহাকে জামাই করিবার উদ্দেশ্য প্রতি আরোপ করিয়া ! গ্লানি ও অম্লতাপে প্রতুলের মন পূর্ণ হইয়া গেল। —কিন্তু কণা, একথা তো আমি কিছুই জানিনে। আমাকে তো কেউ কিছু বলেনি। — আমার কিন্তু ধারণ ছিল যে, আপনি জানন, দাদা বলেছে আপনাকে । আমিও অবাক হয়ে গেছি এ কথা শুনে । —একটা কথা বলবো! বিধবার পুনৰ্ব্বিবাহ তো হচ্ছে সমাজে। —প্ৰতুলদা ওসব কৃথা থাকৃ। যা হয় না যেখানে, সেখানে সে কথা তোলা মিথ্যে মিথ্যে কেন ? —না, আমার কথার উত্তর দাও কণা, আমি আমন ধরনের কথা শুনবো না তোমার মুখে ; তোমায় স্বর্থী করার দিকে আমার লক্ষ্য। সেজন্যে সংস্কার এবং সমাজ আমি অনায়াসেই ঠেলবো । কণার চোখ দিয়া জল গড়াইয়া পড়িল। সে মুখ নীচু করিয়া আঁচলের প্রান্ত দিয়া চোখ মূছিয়া বলিল—আপনার পায়ে পড়ি প্রতুলদা— প্রতুল আর কিছু বলিল না। পরদিন অফিসে আসিয়াই সে চাকুরীতে ইস্তফা দিয়া দিল