পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

O& 8 বিভূতি-রচনাবলী কপুরের মত উৰিয়া গিয়াছে। এ কণা অন্ত একজন স্ত্রীলোকে-তাহার তালবাসায় পায়ী, তাহার পরিচিত কণা এ নয়। কাহাকে সে ভালবাসিবে ? কণা অৰণ্ড খুব আদর-যত্ন করিল। আহারাদির পরে প্রতুলকে পান আনিয়া দিয়া কণা বলিল, কতদিন আসেন নি, অনেক কথা আছে আপনার সঙ্গে প্রতুলদা। বস্থল আমি আসচি । প্রতুল তাৰিতেছিল, তাগ্যে কণার সঙ্গে তাহার বিবাহের হুবিধা বা যোগাযোগ হয় নাই। কি বাচিয়াই গিন্ধাছে সে ! ভগবান বঁাচাইয়া দিয়াছেন । উঃ ! ছ-চারটি মামুলী কথা বলিয়া প্রতুল ছেলের হাত ধরিয়া উহাদের বাড়ী হইতে বাহির হইয়া ইপি ছাড়িয়া যেন বাচিল । পরদিন সকালে শশধরকে ডাকিয়া বলিল, না তাই, ছেলেটার শরীর খারাপ হয়েছে কাল রাত্রেই। তোমাদের যা ম্যালেরিয়ার দেশ, ছেলে নিয়ে এখানে চাকুরী পোষাবে না। অন্তজ চেষ্টা দেখিগে । মাস্টার মশায় প্রশাস্তবাবুর কথা আমার এখনও পরিষ্কার মনে আছে। সেদিন যেন কিসের ছুটি ছিল। বিকেলবেলা আমি ইন্টিশানের ধারে বেড়াতে যাচ্ছিলুম। বিকেলবেলা আমি প্রায়ই ইস্টশানে বেড়াতে যে তুম, বিশেষতঃ কুটির দিনে । হিসহিস করে স্টীম ছাড়ে, খট, খট, করে গাড়ী চলতে থাকে, মাঝে মাঝে বিকট শব্দে সিটি দেয়। রেলের পুলের ওপর বসে আমার সেই সব দেখতে বেশ ভাল লাগত। সন্ধ্যা হতে তখন অনেক দেরী আছে। পশ্চিম আকাশে লাল স্বৰ্য্য যেন ফাগ ছড়িয়ে চারিদিক ভরিয়ে দিচ্ছে। কৰ্ম্মব্যস্ত পৃথিবীর মধ্যে ক্লান্তি ও প্রাপ্তির চিহ্ন ফুটে উঠেছে। ধীরে ধীরে নি:শব্বতায় ধরিত্র ভরে যাচ্ছে। আশেপাশের ঝোপঝাপ থেকে পাখীদের কিচির কিচির শব্দ ভেসে আসছে। আমি আঁকাবাকা মেঠো পথ বেয়ে পাকা কাঠালের তীব্র গদ্ধে চিত্ত মদির করে ধীর পদক্ষেপে এগিন্ধে চলেছি । এমন সময় কলকাতা থেকে ট্রেনখান এসে প্ল্যাটফর্মের ধারে দাড়াল। সে এই দীর্ষপথ অতিক্রম করে সশব্দে হাফ ছাড়তে লাগল। মাত্র কয়েক মিনিটের জন্যে তার বিশ্রাম নেবার অধিকার । এই ক্ষণস্থায়ী মুহূর্ত কয়টির মধ্যে সকলের ওঠানামা শেষ করতে হবে। যথাসময়ে গাষ্ঠী পুনরায় ছেড়ে দিল। সে কিক্ কিক্‌ করতে করতে সরু ফালি লাইনের ওপর দিয়ে কুণ্ডলী পাকিয়ে পাকিয়ে ধুম নির্গত করে ক্রমে ক্রমে লুপ্ত হয়ে যেতে লাগল। তার পেছনের লাল জালোটা বৰক্ষণ ধরে দেখতে পেলুম। আম কাঠালের বাগানের ধার দিয়ে, ধাশ ঝোপের পাশ বয়ে, সবুজ ধান ক্ষেতের কোণ ধরে, পানের ঝাড় পেছনে ফেলে লশৰে ট্রেন এগিয়ে গেল ।