পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীগীর ফুলবাড়ী ©ግ¢ সংবরণ করিতে পারিলাম না ; বিমুর সহিত তাহার বাড়ী গেলাম। বিমুদের ভেতর-বাড়ীতে একজন একহারা কে বসিয়া বিম্বর মার সঙ্গে গল্প করিতেছিল, বিহু দূর হইতে দেখাইয়া বলিল, উনিই । আমি কাছে যাইতে ভরসা পাইলাম না। সন্ত্রমে আপ্ল ত হইয়া দূর হইতে চাহিয়া চাহিয়া দেখিতে লাগিলাম। লোকটি একহারা, খামবর্ণ, জল্প দাডি আছে, বয়স নিতাই মাস্টারের চেয়ে বড় হইবে তো ছোট নয়, খুব গঙ্গর বলিয়াও মনে হইল। লোকটি সম্প্রতি কাশী হইতে আসিতেছে, বিমুর মায়ের কাছে সবিস্তারে সেই ভ্রমণকাহিনীই বলিতেছিল। প্রত্যেক কথা আমি গিলিতে লাগিলাম ও হাত-পা নাড়ার প্রতি ভঙ্গীটি কৌতুহলের সহিত লক্ষ্য করিতে লাগিলাম । লেখকরা তাহা হইলে এই রকম দেখিতে । সেই দিনই গ্রামে বেশ একটা সাড়া পড়িয়া গেল, বিস্তুর বাবা মুখুজ্যেদের চণ্ডীমণ্ডপে গল্প করিয়াছেন, ইহার বড় শালার ছেলে বেড়াতে আসিয়াছে, মস্ত একজন লেখক, তার লেখার খুব আদর। ফলে গ্রামের লোক দলে দলে দেখা করিতে চলিল। বিমুর মা মেয়েমহলে রাষ্ট্র করিয়া দিলেন, ‘প্রেমের তুফানের লেখক তাদের বাড়ী আসিয়াছেন। উক্ত বইখানি ইতিমধ্যে পুরুষের যত পড়ক আর না পড়ক, গ্রামের মেয়ে-মহলে হাতে হাতে ঘুরিয়াছে খুব, অনেক মেয়ে পড়িয়া ফেলিয়াছে, বিস্তুর মা ভ্রাতুপুত্রগর্বে স্ফীত হইয়া নিজে যাচিয়াও অনেককে পড়াইয়াছেন, স্বতরাং মেয়ে-মহলও ভাঙ্গিয়া আসিল একজন জলজ্যান্ত লেখককে দেখিবার জন্ত । বিস্তুদের বাড়ী দিনরাত লোকের ভিড় ; একদল যায়, আর একদল আসে । আজ পাড়াগ, এমন একজন মামুষের— যার বই ছাপার অক্ষরে বাহির হইয়াছে, দেখা পাওয়া আকাশের চাদ হাতে পাওয়ার মতই দুল্লভ । কদিন কি খাতির এবং সম্মানটাই দেখিলাম বিমুর দাদার । এর বাড়ী নিমন্ত্রণ, ওর বাষ্ঠী নিমন্ত্রণ, বিমুর মা সগৰ্ব্বে মেয়ে-মহলে গল্প করেন, "বাছা এসে ক'দিন বাড়ীর ভাত মুখে দিলে ? নেমস্তন্ন খেতে খেতেই ওর প্রাণ ওষ্ঠ্যগত হয়ে উঠেছে—’ ভাবিলাম—সত্য, সার্থক জীবন বটে বিমুর দাদার ! লেখক হওয়ার সম্মান আছে । ভূষণদার সহিত এইভাবে আমার প্রথম দেখা। অত অল্প বয়সে অবশ্ব ভূষণদাদার নিকটে ঘেষিবার পাত্তা পাই নাই—কিন্তু বছর দুই পরে তিনি যখন আবার আমাদের গ্রামে আসিলেন, তখন তাহার সহিত মিশিবার অধিকার পাইলাম-যদিও এমন কিছু ঘনিষ্ঠভাবে নয়। তিনি যে মাদৃশ বালকের সঙ্গে কথা কহিলেন, ইহাতেই নিজেকে ধন্য মনে করিয়া বাড়ী গিয়া উত্তেজনায় রাত্রে ঘুমাইতে পারিলাম না । পে কথাও অতি সাধারণ ও সামান্ত । দাড়াইয়া আছি দেখিয়। ভূষণদাদা বলিয়াছিলেন, “তোমার নাম কি হে ! তুমি বুঝি বিছর সঙ্গে পড় ?”