পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৩৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V\•e বিভূতি-রচনাবলী

  • আমিই ছেপেছি। লোকের দোরে দোরে বেড়িয়ে ছাপানোর জন্তে খোশামোদ কয় – ওসব আমার দ্বারা হবে না।”

মনে হইল ভূষণদাদা আমারই প্রতি যেন বক্রকটাক্ষ করিতেছেন এই সব উক্তি দ্বারা। যাহা হউক, কিছু না বলিয়া চুপ করিয়া রহিলাম। বছরখানেক পরে আমি আমার কৰ্ম্মস্থলে একটা বুকপোস্ট পাইলাম L খুলিয়া দেখি, ভূষণদাদা সেই নারদ’-কাব্যখানি আমায় পাঠাইয়াছেন, সঙ্গে একখানা বড় চিঠি। নারদ’কাব্যখানির উচ্চ প্রশংসা করিয়া বহুলোক ইতিমধ্যে চিঠি লিখিয়াছেন। চিঠিগুলি তিনি পুস্তিকাকারে ছাপিয়া ঐ সঙ্গে আমায় পাঠাইয়াছেন। আমি যেন কলিকাতায় কোন নামকরা কাগজে বইখানির ভাল ও বিস্তৃত সমালোচনা বাহির করিয়া দিই, এই ভূষণদাদার অঙ্কুরোধ । ছাপানো প্রশংসাপত্রগুলি পড়িয়া আমার খুব ভক্তি হইল না। একজন মফঃস্বলের কোন শহরের প্রধান ডাক্তার লিখিয়াছেন, কবি নবীনচঞ্জের রৈবতক কাব্যের পরে আর একখানি উৎকৃষ্ট কাব্য আবার বাংলা সাহিত্যে বাহির হইল বহুকাল পরে। আর একজন কোথাকার প্রধান উকিল লিখিতেছেন, কে বলে বাংলা ভাষার দুৰ্দ্দিন ? বাংলা সাহিত্যের দুৰ্দ্দিন ? ষে দেশে আজও ‘নারদ’-কাব্যের মত কাব্য রচিত হয়ে থাকে (মনে ভাবিলাম, ভদ্রলোক কি বাংলা কবিতার কিছুই পড়েন নাই ? ) সে দেশে—, ইত্যাদি ইত্যাদি। মন দিয়া নারদ’-কাব্য পড়িলাম । নবীনচন্দ্রের রৈবতক’-এর ব্যর্থ অমুকরণ । লম্বা লম্বা বক্তৃতা—মাঝে মাঝে ‘ভূম’, ‘প্ৰপঞ্চ’, ‘ক্ষর’, ‘অক্ষর’, ‘শাশ্বত’, ‘অব্যয় প্রভৃতি শব্দের ভীষণ ভীড়—ইহাকে "নারদ’-কাব্য না বলিয়া গীতা বা শ্ৰীমদ্ভাগবতের পষ্ঠে ব্যাখ্যা বলিলেও চলিত। আমি চিঠির উত্তরে লিখিলাম, নারদ’ বেশ লাগিয়াছে, তবে কলিকাতায় কোন নামকরা মাসিক পত্রিকায় ইহার বিস্তৃত সমালোচনা বাহির করা আমার সাধ্যায়ত্ত নয়। সে চিঠির উত্তরে ভূষণদাদা আমায় আরও দুই-তিনখানি পত্র লিখিলেন—যদি বইখানি আমার ভাল লাগিয়া থাকে, তবে সে কথা ছাপাইয়া প্রকাশ করিবার সৎসাহস থাকা আবগুক ইত্যাদি। সে সব চিঠির উত্তর দিলাম না। ইহার বছরখানেক পরে আমি আমার বিদেশের কৰ্ম্মস্থান হইতে কলিকাতায় আসিয়াছি। শ্রাবণ মাস, তেমনি বর্ধ আরম্ভ হইয়াছে। দিনে রাত্রে বৃষ্টির বিরাম নাই। এ-বেলা একটু ধরিয়াছে বলিয়াই বাহির হইয়াছি। গোলদীঘির কাছাকাছি আসিয়া একখানা হ্যাগুবিল হাতে পড়িল। হ্যাওবিলখানা ফেলিয়া দেওয়ার পূৰ্ব্বে অন্যমনস্কভাবে সেখানার উপর একটু চোখ বুলাইয়া লইতে গিয়া দস্তুরমত বিস্থিত ও উত্তেজিত হইয়া উঠিলাম। উহাতে লেখা আছে—