পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

रौीणि আজও আবার সেই ভাঙ্গা বাশিটা লইয়া গোল বাধিল । বহুদিনের একটা পুরাতন বিবর্ণ পিতলের বশি। মুখের দিকটা খানিক ভাঙ্গিয়া গিয়াছে, ছিদ্রগুলি আর নিখুত হইয়াও নাই, আস্তাকুডের আবর্জনায় ফেলিয়া দিলেই হয়। এমন একটা পুরানো বাঁশি ছোট বউ কেন এমন আঁকড়াইয় থাকে, একথা বহুবার ভাবিয়াও স্বলেখার শাশুড়ী কোন সিদ্ধান্তে আসিতে পারেন নাই। প্রায়ই এই বঁাশিটা লইয়া গোল বাধে । আর লক্ষ্মীছাড়া হতভাগা ছেলেটাও যদি কথা শোনে—না, ঐ বাশিই তার চাই । আজও গোল বাধিল । স্থলেখ। অনেক যত্নে, টুলের উপর দাড়াইয়া অনেক কষ্টে বাশিটাকে খুব উচুতে তুলিয়া লুকাইয়া রাখিয়াছিল। খোকা খুজিয়া খুজিয়া বাহির করিয়াছে এবং ঘরের মেঝেতে বসিয়া অবাধ্য কাঠের ঘোড়াকে তাহা দ্বারা সজোরে আঘাত করিতেছে । স্বলেখা ঘরে ঢুকিয়া দাড়াইয়া রহিল। একবার ভাবিল কিছু বলিবে না। কিন্তু কেমন একটা তীব্র বেদন তাহার সমস্ত মনের গহনে মান হইয়া উঠিল। নিকটে এবং দূরে, সম্মুখে এবং পশ্চাতে কিসের এক কল্যাণময় স্বর যেন শ্রান্ত গতিতে বাজিতে লাগিল। করুণ স্বর কিন্তু সজীব । স্থলেখা খোকার নিকট আগাইয়া গেল। গায়ে হাত বুলাইতে বুলাইতে আস্তে আস্তে বলিল : তোকে একটা নূতন বাশি এনে দেব খোকা জবাব দিল না । ঘোড়া কিছুতেই চলিতেছে না, তাহা লইয়া সে ব্যস্ত। সে ঘোড়ার উপর কয়েক ঘা লাগাইয়া বলিয়া—চল ঘোড়া। চল, হ্যাট— স্বলেখা বলিল—লক্ষ্মীটি ! দে । মুখ ফুলাইয়া খোকা বলিল-না। এবং এই ‘না বহু চেষ্টায়ও ‘হঁতে পরিণত হইল না । বাশির এই অযত্ব স্বলেখ সহিতে পারে না--- হাত হইতে বাশিটা টানিয়া লইল—তোকে পয়সা দেব। দে । খোকা আঁকড়াইয়া ধরিয়া আছে। কিন্তু স্থলেখারও যেন আজ কি রকম এক রোক চাপিয়া গিয়াছে ; বাশি তার চাই, চাই-ই । সে খোকার গালে অকস্মাৎ রাগের বশে ঠাস ঠাস করিয়া গোটাকতক চড় মারিয়া বসিল, হতভাগা লক্ষ্মীছাড়া ছেলে, কথা শোনে না। কী হবে তোর এ ভাঙ্গা বাশি নিয়ে ? সেদিন কিনে দিলাম—সেটায় হবে না, এটা চাই। লক্ষ্মীছাড়া ! বলিয়া হলেখা খোকার পিঠে আরও কয়েকটা চড় বসাইয়া দিল । চড় খাইয়া খোকা চীৎকার করিয়া কাদিয়া উঠিল। শব্দ শুনিয়া মা আসিলেন এবং অন্যান্ত আত্মীয়স্বজন এই নিত্যনৈমিত্তিক উপভোগ্য ব্যাপারটা দেখিতে ছুটিয়া আসিতে ভুলিলেন না।