পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীর ফুলবাড়ী \es চেহারা। বনোজ : তার স্বামী। তার স্বামীকে মনে পড়িয়া যায় । আরও ধীরে ধীরে অনেক কথাই তার মনে পড়িতে লাগিল । এই বনোজ কি দুইই না ছিল। চব্বিশ ঘণ্টা তাহার খোপ খুলিয়া দুষ্টুমি করিয়া এমনি হাজারে রকমের কী বিরক্তিই না করিত। মাঝে মাঝে রাগ করিয়া সে বলিত, স্কলেখার মনে পড়িতে লাগিল— তোমাকে একটি মুহূর্ত পাওয়া যায় না, কেমন মেয়ে তুমি ? স্বলেখা বলিত, দিনরাতই ত কাছে আছি, তবু পাও না । না পাইনে ত। এই বুঝি দিনরাত ? স্থলেখা অবাক হইয়া তাকাইয়া থাকিত । এই বুৰি দিনরাত কাছে থাকা, বনোজ বলিত, হিসেব করে দেখ ত আজকে কতক্ষণ তুমি কাছে ছিলে । সেই ভোরে মিনিট খানেক—দুপুরে তিন সেকেও, আর এই এগেই, ঘাই আর যাই । স্বলেখা প্রতিবাদ করিত না। কারণ, করিয়া লাভ নাই। বলিত, মা বসে আছেন সেই কখন থেকে, আর-আর-ওরা সবাই বা কি ভাববেন, যাই । এমনি কতো টুকরো টুকরো কাহিনী মনে পড়িতে লাগিল । কিন্তু বনোজের একটি প্রিয় জিনিস ছিল—বাশি বাজানো। তন্ময় হইয়া সে বাশি বাজাইত এবং এই একটিমাত্র সময়েই সে সব কিছু ভুলিয়া যাইত–সংসার মুছিয়া যাইত দৃষ্টির সন্মুখ হইতে, সমস্ত কিছু স্বরের ছন্দে নাচিয়া বেড়াইত। কী স্বন্দর বাজাইতেই না সে জানিত । স্বরের উপর স্বর স্বাক্ট করিত এক অপরূপ রূপ-জগতের, যেখানে আর কাহারও স্বান ছিল না, স্থলেখারও নয়। এ সময় স্থলেখা আসিয়া কাছে দাড়াইলেও সেই দিকে তাহার বিন্দুমাত্র খেয়াল হইত না—হয়তো চোখ পড়িয়াও পড়িত না । এই স্বরের রাজ্যে বনোজ ছিল একান্তই একক। ইহার গওঁী পার হইয়া স্থলেখাও কখনও সেই রাজ্যে প্রবেশ করিতে পারে নাই । এইখানেই ছিল তার দুঃখ । সে স্বামীর কাছে গিয়া দাড়াইত, বনোজ একবার ফিরিয়াও তাকাইত না। স্বলেখার রাগ বাড়িয়া যাইত। সে হয়তো টান মারিয়া বাশিটি তাহার হাত হইতে ছাড়াইয়া লইত। দু-একবার একটু আপত্তি তুলিয়া বনোজ চুপ করিয়া থাকিত। স্থলেখাকে সে এতই ভালবাসিত যে অত্যন্ত রাগ হইলেও কখনও তাঁহাকে ব্যথা দিতে পারিত না, বলিত, স্ব—তুমি অমন করে কখনও বাঁশি কেড়ে নিও না আমার কাছ হতে । স্থলেখা জয়ের আনন্দে আত্মহারা হইয়া বলিত, বাশি তুমি আর কখনও বাজাতে পারবে না । মান ভাবে তাহার দিকে তাকাইয়া সে বলিত : কেন ? স্থলেখা রাগিয়া বলিত, কেন দিনরাত শুধু বাশি বাজাবে তুমি ? আমি কতক্ষণ থেকে দাড়িয়ে রয়েছি ।