পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীগীর ফুলবাড়ী 8ՀՊ ঠিক সাতটা কেই বাজল, মুখ ধুয়ে উঠে সবাই বলেছে,এইবার চা আর খাবার জানবার দরকার, অমনি দেখা গেল ক্ষীরমোহনওয়াল তার চেপট হাড়ি মাথায় করে হাজির হয়েছে। দুঘণ্টা ধরে নানারকম হাসির গল্পের মধ্যে বেচা-কেন। নিম্পন্ন করে সে তার চেপষ্ট ছাড়িট। মাথায় তুলে আবার ফিরে খেত। এই রকম দুই তিন বছর কেটে গেল । তারপর আমাদের মেস গেল ভেঙ্গে, আমিও অন্ধুত্র গিয়ে উঠলাম। দিনকতক পরে আমার নতুন মেসে আবার সেই ফিরিওয়াল গিয়ে হাজির। মেসের ছেলেদের মন কি করে পেতে হয়, এ আর্ট ভালভাবে জানা ছিল লোকটার। মাসখানেক যেতে না যেতে ও এখানেও সবার অতি প্রিয়পাত্র হয়ে উঠল। এক হাড়ি করে প্রতিদিন বিক্রি হতে লাগল এ মেসেও। একদিন ক্ষীরমোহনওয়ালা ( ওর নামটা বোধ হয় ছিল পঞ্চানন, কিন্তু ওর নাম ধরে কেউ কোনদিন ডাকেনি, কাজেই ঠিক মনে নেই ) এসে আমাদের হাতজোড় করে বলে—বাবুমশাইর, আমার ছেলের বিয়ের আজ বৌভাত, আপনাদের দোরে খেয়েই তো আমি মানুষ । আপনার সবাই আমার মনিব । বলতে সাহস পাইনে, তবে যদি আপনার দয়া করে আমার ওখানে আজ পায়ের ধুলো দিয়ে মিষ্টিমুখ করে আসেন, তবে বড় খুশী হই । মেসের অনেকে গেল, কি কারণে আমার যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্য্যস্ত বাওয়া ঘটে নি। স্বারা গিয়েছিল তারা ফিরে এসে ফিরিওয়ালার খাতির ও স্বত্ব আতিথ্যের যথেষ্ট প্রশংসা করলে ৷ বেলেঘাট অঞ্চলে কোথায় একটা ছোট খোলার বাড়ীতে ফিরিওয়ালার বাসা । তারই সামনে অন্ত একখানা খোলার বাড়ীর বাইরের ঘরে ওদের বসবার জন্তে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন বিছানা পাতা হয়েছিল। পান তো ছিলই, এমন কি কাচি সিগারেটের পর্য্যস্ত ব্যবস্থা ছিল । মেসের ছেলেরা নববধূর জন্তে কিছু না কিছু উপহার নিয়ে গিয়েছিল। বৌটিও বেশই হয়েছে সবাই বল্পে, তবে বয়েস কম, এগারো বছরের বেশী নয়—ছেলের বয়েসই সবে বোল বছর। তারপর ফিরিওয়ালা সকলকে পরিতোষ করে থাইয়ে ছেড়েছে—লুচি, তরকারি, মাছ, দই, সন্দেশ ইত্যাদি। খাওয়ার পর আবার পান সিগারেট। একজন সামান্ত ফিরিওয়ালা ষে এমন চমৎকার খাতির যত্ন করবে ভদ্রলোকের ছেলেদের, সেটা এমন বেশী কথা কিছু নয়, কিন্তু তার আয়োজন ষে এমন ক্রটিশূন্ত হবে, তার ঘর দোর, বসবার বিছানা যে এমন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হৰে এটাই অনেকে আশা করেনি। এমন কি, যাবার সময়ে সকলে ঠিক করেই গিয়েছিল, যাচ্ছি বটে—নিতান্ত গরীব লোকটা নিমন্ত্রণ করে ফেলেছে, না গেলে মনঃক্ষুন্ন হবে তাই খাওয়া। ওর ছেলের বউয়ের মুখমেখানি স্বরূপ কিছু কিছু ওর হাতে দিয়েই চলে আসবে, কিছু খাবে না কেউ সেখানে। তার পরিবর্ভে তারা যা দেখলে, তা আশাতীত বটে তাদের পক্ষে । দুতিন-দিন ধরে মেলে ফিরিওয়াল ছেলের বিয়েরই কথাই চলল । তারপর আবার ফিরিওয়ালা মেসে আসতে লাগল। আগের চেয়ে তার দশগুণ