পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8○o বিভূতি-রচনাবলী ফিরিওয়ালা হাতজোড় করে প্রণাম করে বঙ্গে—তাই চেয়ে চেয়ে দেখছি, বাবুমশাই না ?--তা এখন আর চোখে তেমন তেজ সেই আগেকার মত। এতদিন কোথায় ছিলেন বাৰু? ফিরিওয়ালার চেহারার কিন্তু বিশেষ কিছু পরিবর্তন হয়নি। দেখে আশ্চৰ্য্য হয়ে গেলাম— মাথার চুল পাকেনি, দাত পড়েনি, মুখের চেহারা ঠিক তেমনি আছে। বল্লাম—আমি দেখছি—তোমার চেহারা রাখলে কি করে ? কিছুই বদলায়নি, মনে হচ্ছে যখন হ্যারিসন রোডের মেসে যেতে, সে যেন কালকের কথা । ফিরি ওয়ালা বল্লে—আর বাবুমশাই, চেহারা! হঠাৎ মনে পড়ল ওর নিরুদ্দিষ্ট ছেলের কথা । আগে মনে হওয়াই উচিত ছিল সেট, কিন্তু তা হয় নি। একটু ইতস্ততঃ করে জিগ্যেস করলুম—ই্য, ভাল কথা, তোমার গেষ্ট ছেলেটি– ফিরিওয়ালা বিষঃভাবে ঘাড় নেড়ে বল্লে—না বাবু, সে সেই ষে চলে গেছে, সেই শেষ। খুব দুঃখিত হলাম শুনে। খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েও তাহলে কোন কাজ হয়নি । —ছেলের বৌটি কোথায় ? —আমার কাছেই আছে বাবুমশায়, আর কোথায় যাবে ? —এখন আছ কোথায় ? • —বেলেঘাটায় সেই বাসাতেই । —তোমার স্ত্রী আছে তো ? —ন। বাবু—লেও আজ চার বছর হলো মারা গিয়েছে। ছেলের নিক্লদেশের পর তার শরীর সেই ষে ভেঙে গেল, আর তো ভাল হয়নি। বাবু এসে পড়েছেন, ভাল হয়েছে— —কেন বল তো ? —আমাকে কিছু সাহায্য করুন বাবুমশাই । বারে বছর হয়ে গেল, এবার খোকার কুশপুতুল দাহ করে শ্ৰাদ্ধ করব। বিধেন নিয়েছি ভটচাধ্যি মশায়ের কাছ থেকে। আমার তেমন রোজগার-পাতি নেই আজকাল—ভিক্ষেশিক্ষে করে ছেলের কাজটা করব— ওকে একটি টাকার বেশী দিতে পারলাম না—নিজেরই চাকুরির অবস্থা স্ববিধে নয়, মেসের খরচ চালানোই দুর্ঘট হয়ে পড়েছে । দিন পনেরো পরে ফিরিওয়াল এসে আমার বল্পে-বাৰু, আজ আমার ছেলের কাজ, আপনি একটু পায়ের ধুলো যদি দেন গরীবের বাড়ীতে, ছোট মুখে বলতে সাহল হয় না আপনাকে—আপনার স্বয়া ওর অনুরোধ এড়াতে পারলুম ন—মন সরলে না । বহুদিনের ধোগাযোগ ওর সঙ্গে । আমার ছাত্রজীবনের আমলের আর কোন পরিচিত লোক কলকাতায় নেই—এই ফিরিওয়ালা ছাড়া । যেতেই হলো । ও একটা ঠিকানা আমায় দিয়ে গেল বেলেঘাটার—ৰে অঞ্চলে জীবনে কখনো ৰাইনি,