পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বেণীগীয় ফুলবাড়ী 88) ঠিক নেই তবে ঘদি নেয় তার বায়নাস্বরূপ টাকাটা দিয়েছে। 鲁 ললিতবাৰু বুঝিলেন না যে, আমার কথা সম্পূর্ণ অর্থহীন। বায়ন করা ইহাকে বলে না, বা এ অবস্থায় কেহ বায়নার টাকাও দেয় না। আতাবের দিনে টাকা আসিধাছে তাহাই যথেষ্ট, কোথা হইতে আসিল, কেন আসিল অত বুঝিয়া দেখিবার অবসর ও ইচ্ছা তাহার ছিল না। সেই হইতে মাঝে মাঝে র্তাহাকে ছু এক টাকা পাঠাইয়া দিতাম ম'শয়ার হাতে, কারণ মণিয়াকে বাধা নিয়মে প্রতি সপ্তাহে আমার বাসায় পাঠাইতে আরম্ভ করিলেন । কষ্টই হইত তাহার কথা ভাবিয়া ! প্রৌঢ় হইলেও ললিতবাবু দেখিতে স্বপুরুষ, ভাল হোক মন্দ হোক তিনিও একজন লেখক ছিলেন, আজ অবস্থা খারাপ হইয়া পড়িয়াছে, তিন কুলেও এদিকে কেহ নাই। এই দূর বিদেশে এই বয়সে কে র্তাহাকে দেখে, কে মুখের দিকে চায় ? টাকা কোন প্রকাশক পাঠাইতেছে, একথা তিনি আমায় মাঝে মাঝে জিজ্ঞাসা করিতেন । আমি কাল্পনিক পুস্তক-প্রকাশকের নাম করিতাম, তাহদের কাল্পনিক চিঠির কথা বলিতাম, কোন রকমে সেকথা চাপা দিয়া অন্য কথা পাড়িতাম । শীতের শেষে সেবার মুঙ্গের হইতে চলিয়া আসিলাম । আসিবার পূবেবী ললিতবাবুর থাত দুখানি তাহাকে ফেরত দিতে গেলাম। তিনি বলিলেন —কি হল মশায় ? —বডড গোলমাল হয়ে গেল সব । ওদের সে দোকানখানা উঠে গেল। ভাইতে ভাইতে গোলযোগ, কেস রুজু হয়েছে, এ অবস্থায় আর ওরা—তাই পরশু আমায় খাতা ফেরত পাঠিয়েছে। পুনরায় ঘটনাচক্রে মুঙ্গেরে গেলাম তিন বৎসর পরে । গিয়াই সৰ্ব্বপ্রথমে ললিতবাবুর কথা মনে হইল ; কষ্টহারিণীর ঘাটে র্তাহাকে দেখিতে পাইলাম না। দু-একজনকে জিজ্ঞাসাও করিলাম, ললিতবাবু মুঙ্গেরে আছেন না অন্তত্ব চলিয়া গেছেন ; কিন্তু বিশেষ কেহ কিছু বলিতে পারিল না। একদিন শহরের বাহিরে টমটম ভাড়া করিয়া বেড়াইতে গিয়াছি, পথে শহর হইতে অস্তুতঃ ছ-সাত মাইল দূরে একটা বড় বাগানবাড়ী দেখিয়া টমটমওয়ালাকে বলিলাম—এ কার বাগানবাড়ী রে ? টমটমওয়ালা ভাল বাংলা বলে । আমার কথার উত্তরে সে বলিল-ই বেণীগীর ফুলবাড়ী আছে। শুনিয়াই বাগানটা দেখিবর শখ হইল । —দেখতে দেয় ? —ই বাবুজি, ইহা এক বাঙ্গালী বাৰু আছে—দেখনে কাহে নেই দেবে ? আমার আগ্রহ আরও বাড়িল বাঙ্গালী বাবুর নাম শুনিয়া। টমটম গেটের সামনে দাড় করাইয়া বাগানের ভিতর গেলাম। অদ্ভুত বাগান। দেখিয়াই বুঝিলাম—এককালে খুব বড় ও শৌখিন বাগানবাড়ী ছিল, বর্তমানে লে অবস্থা নাই, কিন্তু বনে জঙ্গলে সমাকীর্ণ এই পরিত্যক্ত