পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88ર বিভূতি-রচনাবলী বাগানবাড়ীর বস্ত সৌন্দর্ধ্য আমাকে বড় মুগ্ধ করিল। গেট হইতে কাকর বিছানো পথটি বাকিয়া চলিয়াছে-গাছপালার আড়ালে যে ভাঙ্গী পুরাতন বাড়ীর চুন-বালি-খসা গ্ৰহীন, জীর্ণ রূপ দেখা যাইতেছে সেদিকে । বাগানের সর্বজ খুব বড় বড় বৃদ্ধ গাছ—প্রধানত: বট, অশ্বথ, নিম, মেহগ্নি, কৃষ্ণচূড, ছাতিম ইত্যাদি। গাছগুলির তলায় ঘন ফার্ণ ও কাটাজঙ্গল, এখানে ওখানে জংলী গোলাপের ঝোপ, কালো পাথরের হাতীর মূখ, মকর-মুখের পয়ঃনালী, হাতল-ভাঙ্গ লোহার বেঞ্চি, চট ওঠা ঠেস গাথা চাতাল, জঙ্গলের নীচে লতায় পাতায় কাঠবেড়ালীর লঘুপদে ত্রস্ত যাওয়া-আসা, বনটিয়ার ডাক বড় বড় গাছের পাতার ফাক দিয়া সূৰ্য্যালোক আসিয়া পডিয়াছে, একটা পাথরে গাথা শুকনো ফোয়ারার ধারে ঘন চামেলির ঝোপ, চামেলি ফুলের মিষ্টি স্ববাস, প্রাচীন বটগাছে ডাহুক পাখীর ডাক, আর পায়ের নীচের আধশুকনো লম্বা লম্বা উলুঘাসের মধ্যে বহুরূপীর গতিবিধির খড়মড় শৰা---সবট মিলাইয়া একটা নিবিড় শাস্তি ও নীরবতা । কোন বড় লোকের বাগান ছিল এক সময়, বোধ হয় অবস্থা খারাপ হইবার জন্ত আর বাগান দেখাশোনা করিবার শখ নাই। ফোয়ারার কাছে দাড়াইয়া এইসব দেখিতে দেখিতে ঐশ্বর্ষ্যের নশ্বরতা লইয়া বেশ একটা গষ্ঠীর ধরণের প্রবন্ধ ( বাহাতে মানুষের ও সমাজের সত্যকার উপকার হয়, হালকা গল্প বা উপন্যাস লিথিয়া লাভ কি ? ) রচনা করিব ভাবিতেছি, এমন সময় হঠাৎ চমকিয়া উঠিলাম। অামার সামনের কাকরের পথ দিয়া আসিতেছেন কষ্টহারিণী ঘাটের সেই লেখক ললিত ধোবাল । আমি বলিলাম—ললিতবাবু যে ! এখানে কি রকম ? চিনতে পারেন ? ললিতবাবু চিনিতে পারিলেন। আমায় দেখিয়া খুব খুশী হইলেন। জামায় জোর করিয়া বাড়ীর দিকে লইয়া চলিলেন । আজ এখানে থাকিতে হইবে, কোন অস্ববিধা নাই। কতকালের পর দেখা, অনেক কথা আছে, ইত্যাদি । বাড়ীট খুবই পুরানো, সামনে খুব বড় রোয়াক বা চাতাল, সেখানে আমরা পাথরের বেঞ্চিতে গিয়া বসিলাম। ললিতবাবুকে বলিলাম—তার পর ? আপনাকে কত খুজেছি— মুঙ্গের শহরে আজ দিন পনেরো এসেছি। এখানে গড ফরসেকন জায়গায় কি করে এসে পড়লেন ? কিনেছেন নাকি ? এখানে আর থাকে কে ? ললিতবাবু হাসিয়া বলিলেন—জারে, ব্যস্ত হবেন না। সবই দেখতে পাবেন। আপাতত: একটু চা খান—দাড়ান বলে আলি– ললিতবাৰু কাহাকে চায়ের জন্ত বলিয়া আসিলেন তখন বুঝি নাই, কিন্তু প্রায় আধ ঘণ্টা পরে ৰে ব্ৰীড়াবনত স্বন্দী হিন্দুস্থানী মেয়েটি চা ও পাপর ভাজা আনিয়া আমাদের সামনে রাখিল, তাহাকে দেখিয়া চিনিলাম। ললিতবাৰু বলিলেন–চিনেছেন একে ? —ই্যা, ও তো সেই মণিয়া ! ও তা হলে এখনও আপনার কাছেই কাজ করে ? কথাটা শুনিয়া ললিতৰাৰু হাসিলেন, মণিয়ার মুখেও সলঙ্গ হাসির রেখা ফুটিল। সে জগুলিকে মূখ