পাতা:বিভূতি রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড).djvu/৪৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88&9 বিভূতি-রচনাবলী ৰাড়িয়ছে। পরের পয়সায় আমাদেরও বাড়িত। কথাবার্তার মধ্যে একদিন ললিতবাবুকে জিজ্ঞাসা করিলাম, মণিয়ার বাবার প্রাইভেট সেক্রেটারী ছিলেন কতদিন ? কি ভাবে আলাপ एग्न ? —শুনবেন ? কলকাতায় যখন বইটই আর কেউ নিতে চায় না, পাবলিশার খুঁজে পাইনে, তখন তো এলাম মুঙ্গেরে, আজ থেকে বছর বারো আগে। বাবু কমলেশ্বরী সহায় এখানকার বড় উকিল, তিনি বলেন, একজন বড়লোক মস্কেল বাঙ্গালী সেক্রেটারী খুজছে, ইংরিজি চিঠিপত্র লেখার জন্তে –তাই এখানে এসে মণিয়ার বাবার সঙ্গে দেখা করি ; চাকুরিও হয়ে গেল—সাত বছর ছিলাম। মণিয়ার বাবা মারা যাওয়ার পরে আমি এখান থেকে গিয়ে মুঙ্গেরে বাসা করে থfকর্তাম, সে অবস্থায় আপনি আমায় দেখেছিলেন সেবার । মণিয়া জোর করে আবার নিয়ে এল এখানে। কি করি বলুন । সত্যই তো। বেচারী ললিতবাবু ! কি করিবার ছিল তার ? মণিয়াকেও দেখিয়াছি, ললিতবাবুকে সে ছায়ার মত অনুসরণ করে। র্তাহার এতটুকু কষ্ট বা অস্ববিধা—বাস্তব বা কাল্পনিক, দূর করিতে কি ব্যাকুলতা! নিজের চোখে যাহা দেখিতে পাই তাহাকে অবিশ্বাস করিতে পারি কই ? মাস কয়েক যাতায়াতের ফলে ক্রমে আমার মনে হইল যে, মণিয়া যতটা করে, ললিতবাবুর দিক হইতে তাহার অৰ্দ্ধেকও নাই, বরং আরও কম। ললিতবাবু এখানে আছেন যে, তাহার কারণ মণিয়ার উপর তাহার দরদ নয়, তিনি বর্তমানে বেকার, মণিয়া তাহার সব খরচ চালাইয়া থাকে—এইজন্ত । ললিতবাবু মণিয়াকে তাহার ঝি বা পাচিকার মত ভাবেন যেন, হকুমের উপর তাকে সব্বদ। রাখিয়াছেন। অনেক সময় ভাবটা এই রকম দেখান যে, তিনি অতি বড় লোক বাঙ্গালী, এখানে ষে অবস্থান করিতেছেন সে নিতান্তই মণিয়ার উপর কৃপা করিয়া। বেণীগীর ফুলবাড়ীর প্রাচীন বনস্পতিদের ছায়ায় চামেলি ঝোপের ধারের হাতল-ভাঙ্গা লোহার বেঞ্চিত্তে বা পুকুরের ভাঙা ঘাটে বসিয়া কতদিন তরুণী মণিয়ার জীবনের এ অদ্ভুত ট্রাজেডির কথা চিন্তা করিয়াছি। জগতে কেন এমন ঘটে, অমন মৃন্দরী মেয়ে—কত তরুণ প্রেমিক ধাহার এক কণা অনুগ্রহ পাইবার জন্য অসাধ্য সাধন করিতে রাজী হইতে পারিত—তাহার অদৃষ্টে একি দুর্ভোগ ! একদিন এ অবস্থায় এক বলিয়া আছি, মণিয়াকে দূরে দেখিতে পাইয়া ডাকিলাম। এ সময়টা লে খানিকক্ষণ আপন মনে বাগানে বেড়ায় জানি । মণিয়া কাছে জাসিয়া বলিল—এখানে বলে কেন বাবুজী ? —বেশ বলে আছি । ললিতবাবু উঠেছেন ? —এখনও ওঠেন নি। উনি ঠিক চার বাঙ্গলে ওঠেন—তারপর চা করব। ললিতবাবুর বৈকালিক নিস্ত্র ঘড়ির কাটার মত বাধা পথ ধরিয়া চলে, নিয়মের এতটুকু ব্যতিক্রম বড় একটা ঘটিতে দেখিলাম না । বেলা পড়িয়া আদিতেছে ।•••